চেয়ারম্যানের অসুস্থতায় ছেলেই অঘোষিত চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদে ‘অরাজকতা’
মুরাদনগর প্রতিবেদকঃ: মুরাদনগর উপজেলার ৯ নং কামাল্লা ইউপির চেয়ারম্যান ফিরোজ খানের বয়স ৮৫’র উপরে। বার্ধক্যজনীত কারণসহ নানাবিধ অসুখে মাসের মধ্যে ২৫ দিনই অসুস্থ্য থাকেন তিনি। তারর অবর্তমানে ছেলে আবুল বাশার খান অঘোষিত চেয়ারম্যান হিসেবে এ ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ইউনিয়নে কোন ঘটনা ঘটা ও নিস্পত্তি হওয়াও সবকিছুই হচ্ছে তার ইশারায়। পরিবারটি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলেনা। তার সাথে যোগসাজস রয়েছে একই ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের কামাল উদ্দিন মেম্বার। এ অবস্থায় ভেঙে পড়েছে ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সেবাসহ উন্নয়ন কার্যক্রম। একইসঙ্গে বেড়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে কাগজপত্র ও রেজুলেশনে স্বাক্ষর করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বহু অভিযোগ থাকায় , সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে এ ইউপির কমপক্ষে ৫৫ জন ভুক্তভোগি জড়ো হয়ে জানায়, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালিন ভাতা, ওএমএস, ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ড এবং বিভিন্ন সহায়তা পেতে ইউনিয়ন পরিষদের নামে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে ক্ষেত্র বিশেষ ১ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরও ওই ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক গরীব, অসহায় লোক তাদের কাঙ্খিত সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান ফিরোজ খান, তার ছেলে বাশার খান ও মেম্বার কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এদিকে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর এনে দেওয়ার নাম করে জন্মনিবন্ধন, চারিত্রিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাজে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে। সেবা নিতে আসা ইউনিয়নের নাগরিক মানিক মিয়া বলেন, ‘চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির সুযোগে তথ্য উদ্যোক্তা ও ইউপি সচিব জন্মনিবন্ধনের ৫০ টাকা ফি এর জায়গায় ১৫০-৫০০ টাকা, ট্রেড লাইন্সেসের ফি ২০০ টাকার জায়গায় দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। আর কেউ অতিরিক্ত টাকা না দিলে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমার মতো সেবা নিতে আসা আরও অনেকেই চেয়ারম্যান কোথায় জানতে চাইলে কামাল মেম্বার বলেন, চেয়ারম্যানকে দিয়ে কী হবে, টাকা দেন আমিই সব কাজ করে দেবো।’ এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন বলেন, ভূক্তভোগিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে এ অভিযোগ সঠিক, তবে এই টাকা আমি ধরিও নাই। ইউপি সচিব আবু সাইম ও উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী সাবিনা ইয়াছমিনকে নির্দিষ্ট হারে টাকা দিতে হয়। তিনি আরো জানান দীর্ঘদিন যাবতই এ অবস্থা চলে আসছে। চেয়ারম্যানের অবর্তমানে তার ছেলে আবুল বাশার খান এ ইউনিয়ন পরিষদের সবকিছু দেখভাল করছেন। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রতিহিংসামূলক। উক্ত বিষয়ে ইউপি সচিব আবু সাইম ও সমাজ সেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী সাবিনা ইয়াছমিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তারা অস্বীকার করেন। কামাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ খান বলেন, অসুস্থতার কারণে আমি দীঘীদন ঘরের বের হইনা। বিশেষ কোন স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলে আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি স্বাক্ষর দিয়ে দেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার অবর্তমানে মেম্বার কামাল উদ্দিন বিভিন্ন বিষয়গুলো দেখবাল করছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাতার কার্ড দেওয়া হয় নাই এমন ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সহসাই তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মেম্বার বলেন, ‘অসুস্থ চেয়ারম্যান থেকে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করায় পরিষদের তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তবে তার ছেলে দায়িত্ব পালনে ও পরিষদে দ্বন্দ্ব থাকায় এবং চেয়ারম্যান প্রতাপশালী হওয়ায় তার ওপর অনাস্থা যেমন আনা যাচ্ছে না, তেমনি এলাকাবাসিও তার ভয়ে মুখ খোলার সাহস দেখাতে পারছেন না।’