করোনা দুর্যোগেও রূপগঞ্জে অকুতোভয় সৈনিক যারা
মো: সোহেল কিরণ: গোটা বিশ্ব জুড়ে আজ করোণা ভাইরাসের বসবাস। অতিক্ষুদ্র এ ভাইরাসটি একমুহুর্তেই থামিয়ে দিয়েছে স্বাভাবিক জনজীবণ। নির্বিচারে কেড়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ তাজা প্রাণ। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসটি সম্পর্কে পূর্ব কোন ধারণ নেই বিশেষজ্ঞদের। ফলে এখন পর্যন্ত ঔষধ আবিস্কার করাও সম্ভব হয়নি। তাই এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত এদেশেও সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে অঘোষিত লকডাউন। সংকটময় এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিভিন্ন জেলা উপজেলার মত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জেও জীবণ বাঁজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন সময়ের অকুতোভয় সৈনিক রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভূঁইয়া, রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান সহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা। করোনা সংকটকালীন সময়ে লকডাউনে মুহুর্তেই থেমে গেছে স্বাভাবিক জীবণ চিত্র। জীবণ জীবিকার তাগিয়ে প্রতিনিয়ত ছুটে চলা মানুষ গুলো হয়ে আছে গৃহবন্ধী। কর্মহীন হয়ে পরা মানুষ গুলোর খাবারের জোগান দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। সেই নির্দেশনা পালন করতে জীবণ বাঁজি রেখে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে সময়ের এ সাহসী সৈনিকেরা। একদিকে সরকারের দেয়া চাল, ডাল, তেল সহ বিভিন্ন খাদ্য উপহার সামগ্রী ও নগদ অর্থ সুষম বন্টন করে কর্মহীনদের ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছেন তাঁরা, অন্যদিকে সবাইকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালন করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয় নিজের বেতনের টাকায় কর্মহীনদের মাঝে খাদ্য বিলিয়ে দিয়ে মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইউএনও মমতাজ বেগম।
স্বভাবজাত কারণে লকডাউন না মানা মানুষ গুলোকে, ঘরমুখি করতে বিভিন্ন গ্রাম ও বাজার গুলোতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উপজেলার ১০ কর্মকর্তা করোনা আক্রন্ত সন্দেহে কোয়ারাইন্টেন ছিলেন, আবার সুস্থ্য হয়েই কাজে ফিরেছেন। ৫জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ৯জন পুলিশ কর্মকর্তাও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আবার সুস্থ হয়ে অনেকেই কাজেও ফিরেছেন। এ পর্যন্ত রূপগঞ্জ উপজেলায় মোট করোনা আক্রান্ত ৩৯৩জন। ফলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হার না মানা মানুষ গুলো স্থানীয়দের কাছে বার বারই প্রশংসীত হয়ে উঠেছেন। শুধু তাই নয় অতীতেও শীতের গভীর রাতে অসহায়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কম্ভল বিতরণ করে প্রসংশসীত হয়েছেন মহীর্ষী নারী ইউএনও মমতাজ বেগম। সময়ের এই সাহসী সৈনিকদের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করেছেন রূপগঞ্জের সর্বস্তরের জনসাধারণ।
এদিকে থেমে নেই রূপগঞ্জের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরাও। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) -এর নিজস্ব অর্থায়নে রূপগঞ্জেই নির্মাণ করা হয়েছে করোনা টেস্টিং “গাজী পিসিআর ল্যাব”। এ ল্যাবটি নির্মাণের আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা জানতে ঢাকার বিভিন্ন কোভিড-১৯ হাসপাতাল গুলোতে গিয়ে দুর্ভোগের স্বীকার হতে হয়েছে জনসাধারণকে। ফলে করোনা পরিক্ষা করা বা ভর্তী হওয়া ছিল সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু এ ল্যাবটি চালু হওয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জবাসী সহ আশেপাশের কয়েকটি জেলার মানুষজন এখানেই করোনা পরিক্ষা করাতে পারছে। ফলে এখানকার করোনা রোগীরা সেবা নিতে গিয়ে হয়রানী হওয়া থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাছাড়া বসুন্ধরা ও রংধনু গ্রæপের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার পরিবারকে পোলাও চাল, সিদ্ধ চাল, ডাল, তেল, গোস্ত ও নগদ অর্থ সহযোগীতা দিয়েছে কায়েতপাড়া ইউপি ও রংধনু গ্রæপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক।
অপরদিকে, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর নির্দেশে নিজস্ব অর্থায়নে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা আনছর আলীর উদ্যোগে ১০ হাজার দরিদ্র পরিবারের মাঝে দেয়া হয়েছে চাল, ডাল, তেল, খাসী, সেলাই মেশিন সহ নগদ অর্থ সহায়তা। এছাড়া দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাষ্টার সরকারী তহবিল ও নিজস্ব তহবিল থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ভ্ইূয়া, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন সহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা যার যার অবস্থান থেকে কর্মহীন অসহায়দের খাদ্য উপহার সামগ্রী দিতে কাজ করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম জানান, আমি শুধু দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল লকডাউনে কর্মহীন কোন মানুষ যেন অভুক্ত না থাকে। সেই নির্দেশনায় সরকারী উপহার সামগ্রী সহ নগদ অর্থ কর্মহীনদের বাড়ি বাড়ি পৌছে দিয়েছি। মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসি। সারাজীবণ মানুষের জন্যই কাজ করতে চাই।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভূঁইয়া জানান, করোনা ভাইরাস একটি জাতীয় মহামারী। যেহেতু এ ভাইরাসটি একেবারেই নতুন। তাই এর ঔষধ তৈরি করতে পারেনি বিশেষজ্ঞরা। ভাইরাসটি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি সকলের একান্ত সহযোগীতা প্রয়োজন। সকল আধার কাটিয়ে ভোরের সূর্য উঠবেই, গøানি মুছে মানুষ তার স্বাভবিক জীবণে ফিরবেই। তাই এই ক্রান্তিকালে আতংকিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে ও করোনাকে জয় করতে পরামর্শদেন এ জনপ্রতিনিধি।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান জানান, আমরাতো পুলিশ। আমরা সব সময় জনগনের জন্য কাজ করি। কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় সুনামের বদলে দুর্ণাম কুড়াতে হয়। কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিকালে পুলিশ, প্রশাসন, ডাক্তার ও সাংবাদিক ছাড়া আর কেউ মাঠে নেই। করোনা মহামারীর এই সময়ও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের অনেকে আক্রন্ত হয়ে মারাও গেছে। আবার অনেকে সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছে। জাতীয় মহারীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও করোনমুক্ত দেশ গড়তে সরকারকে সহযোগীতা করার আহŸান জানান তিনি।