দারিদ্র্য কোনও দুর্ভাগ্য, নাকি একটা মাইন্ডসেট

Spread the love


মানুষকে সম্পদশালী করে দেয়ার চেয়ে তাকে উপযুক্তভাবে তৈরি করা বেশি জরুরী। অনেকে মনে করেন, যারা দরিদ্র, দুর্ভাগ্যক্রমে দরিদ্র। আর পৃথিবীর সব সম্পদের উপর ‘হাবুইট্টা’ তাদের অধিকার আছে। এক্কেবারে সমান অধিকার। এইটা একটা বুলশিট মনোভাব। যে ব্যায়াম করে তার পেশী বাড়ে। যে নামাজ পড়ে তার কপালে সিজদার দাগ আসে। এখন ব্যায়াম না করে যদি বলেন পেশী কেন বাড়লো না, সমান অধিকার চাই, নামাজ না পড়ে যদি বলেন, আমার কপালে সিজদার হালকা একটা দাগ কেনো এলো না, সমান অধিকার চাই-সম্পদের সমান অধিকার বিষয়টাও এমনি। আলহামদুলিল্লাহ্, আমরা তাকদিরে বিশ্বাস করি। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে দোয়া ও কর্মর মাধ্যমে আল্লাহ্ খুশি হয়ে তাকদির বদলে দিতে পারেন। আমরা এটাও বিশ্বাস করি, তাকদিরে কিছু বিষয় অপরিবর্তনীয় এবং স্বল্প সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যে আপতিত থাকে, স্রেফ ভাগ্যের প্রভাবে।কিন্তু বাকীদের জন্য দারিদ্র্য একটা দুর্ভাগ্য নয়, বরং দারিদ্র্য একটা মনোভাবমাত্র। হ্যা, শুধু একটা মনোভাবের পার্থক্যের কারণে বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র থাকে। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যাদের দুনিয়ার সম্পদ দিয়ে দিলেও তা নিতে রাজি হবে না। এমনকি নিতে রাজি হলেও যেখান থেকে নিতে বলবেন সেখানে সময়মত হাজির হবে না। এমনকি সময়মত হাজির হলেও যার কাছ থেকে নেয়ার কথা তার দিকে ফিরেও তাকাবে না। এমনকি নিয়ে ফেললেও সেটা পথেই হারাবে। আর পথে না হারালে নষ্ট করে ফেলবে। কেন? তার মাইন্ডসেটের কারণে।অনেক সার্ভে হয়েছে লটারিজয়ী কোটিপতিদের উপর। তাদের প্রায় প্রত্যেকেই কয়েক বছরের মধ্যে আগের জায়গায় ফিরে গেছে। কেন? কারণ সে এটা ডিজার্ভই করে না। সে সম্পদের জন্য প্রিপেয়ার্ডই নয়। তার অবচেতন মন আসলে এটা চায়ই না। তার সক্রিয়তাই নেই সম্পদ রক্ষা বা বৃদ্ধির জন্য। জ্যাক মা তো সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে কল্পনার রাজপুত্র টাইপ একটা লোক। তেইশ বিলিয়ন ডলার আছে তার। তার কথাই শুনুন কথাগুলো কঠোর মনে হতে পারে: পৃথিবীতে কাজ করা মানুষগুলোর মধ্যে সবচে অকেজো হল দরিদ্ররা।তাদের ফ্রিতে কিছু দিন, ভাববে এটা ফাঁদ। ছোট্ট ইনভেস্টমেন্ট দিন, বলবে, বেশি আয় করা সম্ভব নয় এ দিয়ে। নতুন ব্যবসার কথা বলুন, বলবে, এটা এমএলএম, ডেস্টিনি নাকি? বড় কিছু করতে বলুন, বলবে টাকা নাই।দোকান চালাতে বলুন, বলবে স্বাধীনতা নাই। নতুন কিছু ট্রাই করতে বলুন, বলবে অভিজ্ঞতা নাই। প্রথাগত ব্যবসা করতে বলুন, বলবে করা বড় কষ্টকর। তারা কিছু কাজ করতে বলে অবশ্য: গুগল করতে বলে, বন্ধুদের পরামর্শ নিতে বলে, আবার বন্ধু যেনতেন হলে হবে না, তার মতন সর্বহারা এবং কর্মহারা বন্ধু হতে হবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের চেয়ে বেশি ভাবে এবং একজন চোখবিহীন মানুষের চেয়েও কম করে। স্রেফ জিগ্যেস করুন, কোন্ কাজটা প্রোপারলি করতে পারবে, কোনও স্থির জবাব পাবেন না।আমার পরামর্শ হল, আপনার হৃদপিন্ড যত দ্রুত ধড়কায়, তারচেয়ে দ্রুত কাজ করুন- চিন্তা করার বদলে।দরিদ্র আজীবন ফেইল করতে থাকবে মাত্র একটা কারণে- কাজকে পিছিয়ে রাখা, কাজকে পরের জন্য ফেলে রাখা। দীর্ঘসূত্রিতা। তাই, দারিদ্র্য একটা মাইন্ডসেট ইস্যু, আর্থিক ইস্যু নয়।

লেখক/কলামিস্টঃ হযরত মাওলানা ফকির সৈয়দ হোসেন শাহবাজী

সভাপতি,শাহবাজ ফাউন্ডেশন।ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *