বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক: সদরঘাটের পল্টুনগুলোতে বিআইডব্লিটিউএ নৌপুলিশের ‘সিসিটিভির ফুটেজ সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া দুঘর্টনার দৃশ্যটি দেখে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর। সোমবার (২৯ জুন) লঞ্চডুবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী।দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সদরঘাটের পল্টুনগুলোতে বিআইডব্লিটিউএ নৌপুলিশের ‘সিসিটিভির ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এটা যদি পরিকল্পিত হয় এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ইতিমধ্যে চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা সঠিক ঘটনা অনুসন্ধান করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক, দুঃখজনক ঘটনা। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মন্ত্রণালয় থেকে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। বিআইডব্লিউটিএ নিহতদের পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে। প্রতিটি পরিবারে তাৎক্ষণিকভাবে দাফনের জন্য ১০ হাজার করে দেয়া হচ্ছে এবং পরবর্তীতে প্রতি পরিবারে দেড়লাখ টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে।‘লঞ্চটি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী নিয়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি মানার পরও তাদের সলিল সমাধি হলো। লঞ্চে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল কিনা তা আমরা তদন্ত করে দেখবো। সেখানে কেউ দায়ী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। -এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এবং নৌপুলিশের ডিআইজি মো. আতিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।সোমবার সকালে সদরঘাটের শ্যামবাজার পয়েন্টে ময়ূর-২ নামের লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় মর্নিং বার্ড লঞ্চ।নৌপুলিশের সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া দুঘর্টনার দৃশ্যতে দেখা যায়, সকাল ৯টা ১২মিনিটে ফরাশগঞ্জ ঘাট সংলগ্ন কুমিল্লা ডক এরিয়ায় ঘাট থেকে পেছন দিকে (ব্যাকে) যাচ্ছিল ময়ূর-২। এ সময় পেছনে থাকা মুন্সিগঞ্জ কাঠপট্টি থেকে আসা যাত্রীবোঝাই ‘মর্নিং বার্ড’ এর ওপর উঠে যায় দৈত্যাকার ময়ূর-২। মুহূর্তেই তলিয়ে যায় লঞ্চটি। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে।জানা গেছে, এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে পুরুষ ১৯ জন, ৮ জন নারী এবং ৪ জন শিশু রয়েছেন। সোমবার সকালের এ ঘটনায় বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পরিচয় মিলেছে ৩০ মরদেহের। তারা হলেন- ১. সত্যরঞ্জন বনিক (৬৫), ২. মিজানুর রহমান (৩২), ৩. শহিদুল (৬১), ৪. সুফিয়া বেগম (৫০), ৫. মনিরুজ্জামান (৪২), ৬. সুবর্ণা আক্তার (২৮), ৭. মুক্তা (১২), ৮. গোলাম হোসেন ভুইয়া (৫০), ৯. আফজাল শেখ (৪৮), ১০. বিউটি (৩৮), ১১. ছানা (৩৫), ১২. আমির হোসেন (৫৫), ১৩. মো. মহিম (১৭), ১৪. শাহাদাৎ (৪৪), ১৫. শামীম ব্যাপারী (৪৭), ১৬. মিল্লাত (৩৫), ১৭. আবু তাহের (৫৮), ১৮. দিদার হোসেন (৪৫), ১৯. হাফেজ খাতুন (৩৮), ২০. সুমন তালুকদার (৩৫), ২১. আয়শা বেগম (৩৫), ২২. হাসিনা রহমান (৪০), ২৩. আলম বেপারী (৩৮), ২৪. মোসা. মারুফা (২৮), ২৫. শহিদুল হোসেন (৪০), ২৬. তালহা (২), ২৭. ইসমাইল শরীফ (৩৫), ২৮. সাইফুল ইলাম (৪২), ২৯. তামিম ও ৩০. সুমনা আক্তার। ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, সোমবার সকালে আরেকটি লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লেগে লঞ্চটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ নারী ও ৩ শিশুসহ ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জনের পরিচয় মিলেছে। তবে এখনও ঠিক কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, সেটাও স্পষ্ট নয়। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরাও উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচারক একেএম আরিফ উদ্দিন জানান, নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারে ডুবুরিরা কাজ করছে।