অনাগত বিপদের দিনের জন্য সম্পদ জমিয়ে রাখা নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের সুন্নাতঃ কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুত হোন

Spread the love



সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারীঃ করোনাভাইরাস শুধুমাত্র একটা মহামারী নয়। সাথে নিয়ে আসছে অর্থনৈতিক মহামন্দা। এই কঠিন সময়ে আমাদের আবেগপ্রবণ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কঠিন সময়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিন। কুরবানী দেয়া আমাদের মাজহাবে ওয়াজিব, অন্যান্য মাজহাবে সুন্নাহ। কাজেই আমাদের মাজহাব মতে কুরবানী আদায় করলেই হয়। গরু দিন আর ছাগল। হ্যাঁ, এখন নিজের পরিবার ও বিপদের সময়ের জন্য টাকা জমিয়ে রাখাও খুব জরুরি। যদি কেউ গরুর জায়গাতে ছাগল দিয়ে সেই টাকা নিজের হাতে ধরে রাখেন তবে এই পরিস্থিতিতে তা খারাপ কিছু হবে না। অথবা ছাগল কুরবানি দিয়ে বাকি টাকায় যদি গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ান তবে তা উত্তম হবে। বিপদের দিনের জন্য সম্পদ জমিয়ে প্রস্তুতি নেয়া, এটা ইউসুফ আলাইহিস সালামের সুন্নাহ। সামনে ভয়াবহ সময় আসছে আমার যতটুকু মনে হচ্ছে। সেই সময়ে অতিরিক্ত কিছু টাকা হাতে থাকলে সমাজের অনেক মামুষকেও সাহায্য করা যাবে। আমার আশংকা হচ্ছে, সমাজের অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও দুয়ারে দুয়ারে ঘুরবে সাহায্যের জন্য। অন্তত কর্জ তো চাইবেই। সেসময় আপনি অনেকের পাশে দাঁড়াতে পারবেন যদি আপনার হাতে জমানো কিছু টাকা থাকে। মিতব্যয়ী হতে হবে। ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক সকল আচার অনুষ্ঠানে মিতব্যয়ী হতে হবে। রাষ্ট্রীয় খরচ নিয়ে কিছু বলা মানে এই দেশে অরণ্যে রোদন করা। তাই সেদিকে গেলাম না। রাজনীতিবিদদের হরিলুট কোনদিন শেষ হবে না, আল্লাহ পাক কোন বিশেষ ব্যবস্থা না করলে। খাদ্যের বিন্দু পরিমাণ অপচয় করা যাবে না। কোন অবস্থাতেই অপচয় বা খাদ্য নষ্ট করা জায়েজ নেই। এই অবস্থায় তো আরো বড় গোনাহ হবে খাদ্য অপচয় করলে, ফেলে দিলে, নষ্ট করলে। খরচের ক্ষেত্রেও মিতব্যয়ী হওয়া দরকার। এই টাকা দিয়ে আপনি বিপদের সময়ে আপনার পরিবার পরিজন, রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবসহ সমাজের মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবেন। বহু মানুষ অলরেডি চাকুরি হারিয়েছে, অনেকেই হাফ বেতন পাচ্ছে। অনেকেই চাকুরি করে যাচ্ছে নিয়মিত কিন্তু বেতন পাচ্ছে না। শত শত প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার বন্ধ হওয়ার পথে। মানুষ জমানো টাকা থেকে ভর্তুকি দিয়ে দিয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সবাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে না। তাই লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হওয়া খুবই অবশ্যম্ভাবী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কঠিন সময়টার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা দরকার। যেভাবে ইউসুফ আলাইহিস সালাম প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। প্রথমে সাত বছর খুব বেশি ফসল উৎপাদন হয়েছে। তিনি সেসময় ফুড স্টোরেজের মাধ্যমে পরবর্তী ৭ বছরের খড়া ও দুর্ভিক্ষকালীন সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন, যা আল্লাহ পাক সূরা ইউসুফ ১২ নাম্বার সূরাতে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকরভাবে বর্ণনা করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের দেশেও এবছর ফসলের ভালো উৎপাদন হয়েছে। আমাদেরও পরিকল্পনা মাফিক চলা উচিত। সরকারের নীতি নির্ধারক থেকে শুরু করে একদম পারিবারিক পর্যায় পর্যন্ত পরিকল্পনামাফিক চলা খুবই প্রয়োজন।আর এখন দয়া করে কেউ চাকুরি ছাড়বেন না, যেকোন পরিস্থিতিতেই চাকুরির সাথে যুক্ত থাকুন। যে যে প্রতিষ্ঠানে আছেন চেষ্টা করুন সেই প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখার। মালিক পক্ষ জুলুম করবেন না কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর। আগে যদি মুনাফা করে থাকেন তবে অবশ্যই তা নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাশে দাঁড়ান। আর কারো পুরোটা দেয়ার আসলেই ক্ষমতা না থাকলে অন্তত হাফ বেতন দিয়ে হলেও তাদেরকে টিকতে দিন। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে এরাই কিন্তু আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আগের জায়গায় নিয়ে আসবে ইন শা আল্লাহ। অতীতেও এরা আপনার সাথেই ছিল। সর্বোপরি আমাদের সবার আল্লাহ তায়া’লার উপরে পূর্ণ তাওয়াক্কুল রাখতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করার কোন বিকল্প নেই। সারা পৃথিবীর মানুষের জুলুম অন্যায় অবিচারের কারণে এই মহামারী আমাদের উপরে নাজিল হয়েছে, তা ভুলে গেলে চলবে না। সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাককে স্মরণ করুন। অন্যায় ও গোনাহের রাস্তা বর্জন করুন। এই বিশ্বাস আমাদের আরো দৃঢ় করতে হবে যে, রিজিকের মালিক আল্লাহ তায়ালা। তিনি আমাদের পানাহারের ব্যবস্থা অবশ্যই করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *