থামুন ! সড়কে লাশের মিছিল

Spread the love

যতোই যাচ্ছে দিন সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। এখানে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ কেউ নিরাপদ নন। কিন্তু কেন ? সময়ের পরিবর্তনে সারাদেশেই যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতর হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্পও নেই। কিন্তু এসব উন্নয়ন তো মানুষের জন্যই ! আর যাদের জন্য এতোসব উন্নয়নের আয়োজন সড়কে তাদেরই পিষে মারছে ঘাতক যানবাহন। তবে এ যেনো বাতির নিচেই অন্ধকার। চুখের সামনে পিষে মারা হচ্ছে আত্মীয়-স্বজন। নিহতের পরিবাররা হারাচ্ছে তাদের রঙ্গিন স্বপ্ন। স্বজনহারাদের আহাজারীতে প্রতিটি মুহুর্তই ভাসিয়ে তুলছে চারপাশ। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। আর এ ভাবে কতোশত মৃত্যুর পর সুদৃষ্টি মিলবে সংশ্লিষ্টদের ? এমন প্রশ্ন এখন সবার।সড়ক পরিবহনে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না মালিক-শ্রমীক-কর্মচারীদের কেউ। ফলে অসতর্কতা বা বেখেয়ালীপনার শিকার হয়ে প্রতিনিয়তই পৃষ্ট হচ্ছে প্রিয় মানুষজন। প্রতিবার এক একটি মৃত্যুর পর হুশ ফিরে আসে সাধারণ মানুষের। চলে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচী সহ নানা কার্যক্রম। কিন্তু নিমিষেই যেনো তা আধারে হারায়। আবারও নিহতের ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত মুখ বন্ধ থাকে সবার। আজ নয় কাল এভাবেই দিন গড়িয়ে মাস, তারপর বছর, যুগ পেরিয়ে শতাব্দী। দাবি রয়েই যায়। নিরাপদ সড়ক চেয়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠণ, ছাত্র সংগঠন সহ সারাদেশের মানুষ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়ে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। শুধু সংশ্লিষ্টদের মিথ্যে আশার বুলি নেয়ে ঘরে ফিরে তারা। পরিণামে আজ মরছে এ, কাল সে, পরশু আবার কে ? বেসরকারী সংগঠণ নিরাপদ সড়ক চাই এর হিসেব মতে গত বছরে ৪ হাজার ৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা যায় ৫ হাজার ২২৭জন। এর আগর বছর ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যায় ৪ হাজার ৪৩৯জন। গত ১ বছরে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১ হাজার ৫৫৯টি এবং প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে ৭৮৮জন। অর্থাৎ ১৮ শতাংশ মৃত্যুর হার বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১৮ জনেরও বেশি মানুষজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কিন্তু এর শেষ কোথায় ? গত ৭ই আগষ্ট শুক্রবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যু হয় পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্নার। এমন লড়াকু নারী শক্তিকে হারিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন সচেতন মহল। এরপর নিরাপদ সড়ক ও সাইকেল লেনের দাবি করে নারায়ণগঞ্জ শহরে সাইকেল র‌্যালি ও এক দল তরুনী শহরের মূল সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে লাল রং দিয়ে লিখে যাচ্ছে, ‘সাইকেল লেন চাই’, ‘নারায়ণগঞ্জে সাইকেল লেন চাই’। যাদের প্রত্যেকের সাথে রয়েছে একটি করে সাইকেল, মাথায় রয়েছে হেলমেট ও পিঠে আছে স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। যাতে লেখা আছে, ‘সাইকেলের জন্য পৃথক লেন চাই’, ‘গাড়ির চাপায় পৃষ্ট হয়েছে রেশমা, তারপর কে ?’ ‘সড়ক দূর্ঘটনা, নাকি সড়কে পরিকল্পীত হত্যাকান্ড ?’নারায়ণগঞ্জের নারী সাইকেল আরোহীদের দল ‘নভেরা’র সদস্যরা একটি পৃথক সাইকেল লেনের দাবিতে শহরে সাইকেল র‌্যালিও করে। এসময় শহীদ মিনার, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে, আলী আহমেদ চুনকা নগর মিলনায়তন ও পাঠাগারের সামনে এবং নগর ভবনের সামনে বড় বড় অক্ষরে লাল রং দিয়ে নিজেদের দাবি সড়কে লিখে দেয়। ইতিহাসকে স্বাক্ষী রাখে তারা।জন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে সকাল সাড়ে ৬ টা থেকেই শুরু করা হয় এ কার্যক্রম। সকাল গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত নানা স্লোগান লেখা, সাইকেল র‌্যালী ও শহীদ মিনার, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবন, আলী আহাম্মদ চুনকা নগড় মিলনায়ন ও পাঠাগারের সামনে অবস্থান নেয় সংগঠনের সদস্যরা।‘নভেরা’র উদ্যোক্তা ফারজানা মৌসুমী বলেন, ‘আমরা জানি কিছুদিন আগে পর্বতারোহী রেশমা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ব্যস্ত সড়ক, মহাসড়কে যদি পৃথক সাইকেল লেন করে দেয়া হয়, তবে এই ধরনের দূর্ঘটনাগুলো কমে আসবে। প্রতিভাবান পর্বতারোহী রেশমার মতো আর কোনো সম্ভাবনাময় মানুষকে আমরা সড়ক দূর্ঘটনায় হারাতে চাই না। তাই এ পৃথক সাইকেল লেনের দাবি নিয়ে আমরা আজ রাস্তায় দাড়িয়েছি।’ ‘নভেরা’র সদস্য ফারহানা মানিক মুনা বলেন, ‘পর্বতারোহী রেশমার ঘটনাটি সড়ক দূর্ঘটনা নাকি সড়ক হত্যাকান্ড ? সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। সাইকেল যেখানে একটি পরিবেশ বান্ধব বাহন সেখানে সড়কে এ সাইকেলের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা তো নেই, বরং অনিরাপদ। একজন নিয়োমিত সাইক্লিস্ট হিসেবে এই অনিরাপত্তা আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করি।’সর্বোপরি, বাংলাদেশ পরিবহন আইনের কার্যকরী ব্যবহারের মাধ্যমে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করা, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন মেরামত না করা পর্যন্ত চলাচল বন্ধ রাখা, অভারটেকিং বন্ধ করা, সড়ক আইন মেনে চলা সহ পরিকল্পীত বা অনিয়ন্ত্রীত সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করতে সংশিষ্টদের নজরদারী যেনো সময়েরই দাবি।


লেখকঃ মো: সোহেল কিরণ, গণমাধ্যমকর্মী।
[email protected]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *