চাঁদপুরে অবৈধভাবে বিভিন্নস্থানে দোকানে দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার

Spread the love

মোহাম্মদ বিপ্লব সরকার : নিয়মনীতি ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই চাঁদপুরের বিভিন্নস্থানে দোকানে দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস (সিলিন্ডার গ্যাস)। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, কিশোর, নারীসহ, সাধারণ মানুষ । চাঁদপুর শহর এবং শহরের বাহিরে বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা গেছে মুদি দোকান হতে শুরু করে মোবাইল লোডের দোকান, লাকড়ি দোকান, প্লাস্টিকের সামগ্রী ও টিনের দোকান, ফোন-ফ্যাক্সের দোকান, সেলুন, স্যানিটারির দোকানেও এসব সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা গেছে যে, চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোড, মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক, বাসস্ট্যান্ট, মিশন রোড, ওয়্যারলেস, বঙ্গবন্ধু সড়ক, পুরান বাজার, নতুন বাজার, হাজী মহসীন রোড, বাবুরহাট, টেকনিকাল সহ শহর এবং শহরের বাইরের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের হাট বাজারে বিভিন্ন দোকানে, দোকানে কোন প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই অবাধে এসব এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে। সরেজমিন ও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলার প্রত্যেকটি উপজেলার বিভিন্ন সেলুন, মুদি দোকান, প্লাস্টিক সামগ্রী, কসমেটিক্স, জুতার দোকান, ফার্নিচার ও ফোন-ফ্যাক্সের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে এই গ্যাস সিলিন্ডার। জেলার অধিকাংশ দোকানির এলপি গ্যাস বিক্রির অনুমোদন নেই। অনেক দোকানে পুরাতন সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস বিক্রি হতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে মতে, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয় ও মজুদ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ-জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ অধিদপ্তরসহ জেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কথা উল্লেখ থাকলেও শুধুমাত্র পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন প্রকাশ্যেই। অথচ স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কোন প্রকার ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয় করা সম্ভব নয়। আইন অনুযায়ী অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে খুচরা বিক্রির জন্য মাত্র ১০টি গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার রাখা যাবে। তারচেয়ে বেশি হলে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি বাধ্যতামূলক। অথচ এমন নিয়ম থাকলেও অনেক ব্যবসায়ী একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার দোকান মজিদ করে রাখেন। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি না থাকায় জেলার অধিকাংশ দোকানে বিভিন্ন সাইজের এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য তালিকাও নেই। এসব মৌসুমি দোকানিদের এলপি গ্যাস ব্যবহারের নিয়ম কানুনও জানা নেই। সস্তায় নিম্নমানের রেগুলেটর, গ্যাস সরবরাহ পাইপ ও অনুমোদনহীন বিভিন্ন কোম্পানির ঝুঁকিপূর্ণ চুলা বিক্রিও হচ্ছে। বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও রেস্টুরেন্টে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে এবং দামও রাখা হচ্ছে ইচ্ছেমতো। এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম কানুন না জানায় দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটছে কোথাও কোথাও। এছাড়াও বিভিন্ন সিলিন্ডার বিক্রয়কারী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকার কথা থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তা থাকলেও অনেকস্থানেই তার কোন ব্যবস্থা নেই। খবর নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের এবং শহরের বাহিরে সব কটি উপজেলার বিভিন্নস্থানে এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে অবাধে। এতে এই এলপি গ্যাস ব্যবহারে অভ্যস্ত সাধারণ মানুষ অনেক বিপাকে পড়তে হয়। অনেক বাসা বাড়িতে গ্যাসলাইন না থাকায় তারা সিলিন্ডার গ্যাস নির্ভর হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে সিলিন্ডার গ্যাস কিছুটা নিয়মের মধ্যে বিক্রি হলেও এখন আর তা হচ্ছে না। নিয়ম না মেনে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আবার কেউ কেউ অনুমোদন ও লাইসেন্স ছাড়াই এই জ্বালানি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। আর সেই যন্ত্র না থাকায় যে কোন মুর্হুতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারও জানা নেই এসব ব্যবসায়ীদের । জনবহুল আবাসিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে এ ব্যবসা চললেও দেখার কেউ নেই। সিলিন্ডার গ্যাসের ছড়াছড়ি আর বেচার হিড়িকের কারণে দুর্ঘটনার শস্কাও রয়েছে অনেক বেশি। চাঁদপুরের বিভিন্নস্থানের এলপি গ্যাস বিক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই সিলিন্ডার বিক্রি করে আসছি। কিন্তু অনুমোদন বা লাইসেন্সের ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই। এ ব্যাপারে চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মোঃ ফরিদ আহমেদ জানান, যারা এসব এলপি সিলিন্ডার বিক্রি করে তারা যে পরিমাণ নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখবে সে শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। যদি কোনো ব্যবসায়ীরা লাইসেন্সবিহীন কিংবা অগ্নিনির্বাপণের কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখেই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটিও আমরা দেখবো। এছাড়া যারা লাইসেন্স নিয়ে সিলিন্ডার ব্যবসা করেন তাদেরকে আমরা মাঝে মাঝে সচেতন করি। বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষনও দেয়া হয়। বর্তমানে দেশের করোনা পরিস্থিতির কারণে গত কয়েক মাস ধরে এ বিষয়ে তেমন কোন তদারকি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *