Spread the love

চেপে রাখা ইতিহাস : বাঙালি-মুসলমানদের সু-শিক্ষিত করতে কতিপয় সূফির ঐতিহাসিক অবদান

অনলাইন টাইমস ডেক্সঃ সূফি মানেই শিক্ষিত, সূফি মানেই শিক্ষার সূতিকাগার এবং সূফি মানেই শিক্ষার অপার প্রসার। মিশরের আল-আজহার, বাগদাদের নিজামিয়াসহ পৃথিবীর আনাচে-কানাচে যত বিদ্যালয়ের ইতিহাস নাড়বেন, ঘাটবেন তার একেবারে সিংহভাগেই সূফিদের সতেজ অস্তিত্ব পাবেন। ইবনে সীনা, আবু রুশদ, জাবির আল হাইয়ান, ওমর খৈয়ামসহ মুসলমানদের গর্ববোধ্য যত বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক আছেন তাঁদের ষোলো আনার মধ্যে বারো আনাই সূফি। পাশ্চাত্যে সূফিরা শিক্ষায়, সংস্কারে যতটা উচ্চে, প্রাচ্যের বঙ্গে ততটা নিচে, মানে দৃশ্যপটটা এরকম। পাশ্চাত্যবাসী সূফিদের শিক্ষা-সংস্কারে যতটা অগ্রগামিতা, উৎসাহ দেখি প্রাচ্যের বঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশে কিন্তু তুলনামূলক ‍খুবই কম। এটা সূফিপ্রেমী পাঠকের কাছে দুঃখবোধ উথলে উঠার খবর, কিন্তু আরও হতাশার খবর হচ্ছে, এই ‘কম’টাও কিন্তু আমাদের বয়ানে তেমন উঠে আসে না। বঙ্গবাসী সূফিদের এই ‘কম’টাই যে বাঙালি-মুসলমানের শিক্ষাক্ষেত্রে উঠে আসার-প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবার-অবদান রাখার মূলে প্রোথিত তার হলফনামা কিন্তু আমাদের আলোচনায় আশ্চর্যবোধকভাবেই অনুপস্থিত। বলার মতো, বুক উঁচু করে গর্ব করার মতো এ বিষয়টা সামনে আনা খুব জরুরী, খুব। এখানে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করছি।

বাঙালি-মুসলমান শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল ১৯০৫ পর্যন্ত, মানে বঙ্গভঙ্গ প্রসঙ্গ পর্যন্ত। তো আস্তে আস্তে তারা শিক্ষায় যে উঠে এসেছে সে উঠে আসার সফরটা কিরকম? সফরকারী কারা?

তিনটা নাম বলবো, যাদেরকে ছাড়া শিক্ষার ময়দানে বাঙালি-মুসলমানের তাঁবু গাড়ার কথা কল্পনার অতীত।

১. মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী

২. খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ্

৩. ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

এবার বাঙালি-মুসলমানের শিক্ষার অগ্রগতিতে তাঁদের অবদানগুলো ভাসা-ভাসা জ্ঞানে তুলে দেই।

১. মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী: পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আধুনিক মৌলবী বলা হয় মাওলানা ওবায়দুল্লাহকে। কলকাতা আলিয়া থেকে ১৮৫৭ সালে এন্ট্রান্স পাশ করেন তিনি। ১৮৬৫ সালে হুগলি কলেজেন অ্যাংলো-আরবি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত হন এবং সেখানেই বিখ্যাত ইতিহাসবিদ সৈয়দ আমীর আলী তাঁর ছাত্রত্বে অধ্যয়ন করেন। ১৮৭৩ সালে ইংরেজ সরকারের অধীনে ঢাকায় মুসলমানদের জন্যে যে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে তার সর্বপ্রথম সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন তিনি; মোহসিন ফান্ডের অর্থায়নে এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিধায় প্রথমে ‘মোহসিনিয়া মাদ্রাসা’ বলে নামকরণ হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে ‘ঢাকা মাদ্রাসা’ হিসেবে বিখ্যাত হয়, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এর নামকরণ করে ‘কবি নজরুল সরকারি কলেজ’। ঢাকার এ আদি মাদ্রাসার সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, প্রতিষ্ঠার এক বছর পর অর্থাৎ ১৮৭৫ সালেই তিনি ‘অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগ’ চালু করেন ইংরেজি শিক্ষার জন্য। চিন্তা করুন, যে-সময়ে বাঙালি-মুসলিম সমাজে ইংরেজি ভাষাকে কুফুরি ভাষা হিসেবে দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সে-সময়ে তিনি ইংরেজি শিক্ষার জন্য স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। ১৮৭৯ সালে তিনি ‘সমাজ সম্মিলনী’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮৮৩ সালে ঢাকার মুসলমান ছাত্রদের উদ্যোগে যে ‘ঢাকা মুসলিম সুহৃদ সম্মিলনী’ গঠিত হয়েছিল তারও প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন তিনি। রামমোহন রায়ের ‘তুহফাতুল মুওয়াহেদীন’ গ্রন্থটি তিনি ইংরেজিতে ভাষান্তর করেন ১৮৮৪ সালে। ইংরেজিতে তাঁর রচিত আরবি ব্যাকরণ Grammar Of Arabic Language আজও Amazon এ পাওয়া যায়। তাঁর পরিবারও তৎকালীন বঙ্গদেশে শিক্ষার দিক থেকে দুর্লভ এবং খ্যাতিমান ছিল। তাঁর বড় ছেলে আবদুল্লা আল-মামুন সোহরাওয়ার্দী ইংরেজিতে অনার্সসহ পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, সেখানে আরবি বিভাগের প্রধান হিসেবে চাকরিও করেছিলেন বেশ কয়েক বছর এবং কনিষ্ঠপুত্র হাসান সোহরাওয়ার্দী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম উপাচার্যসহ বহু খ্যাতি অর্জন করেন; আমাদের রাজনীতির প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর পৌত্র এবং বাংলাদেশের প্রথম নারী ব্যারিস্টার সালমা সোবহান তাঁর পৌত্রী। এভাবে তাঁর পরিবারবর্গ দ্বারাই পূর্ববাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রসরতা দৃশ্যমান হয়েছিল। মজার বিষয় হচ্ছে, তিনি কখনো তাঁর নামের সাথে ‘সোহরাওয়ার্দী’ লিখেননি, তাঁর ইন্তেকালের পর কবরের ফলকে পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে তাঁর নামের পর ‘সোহরাওয়ার্দী’ উপাধি জুড়ে দেন। জানা যায়, সপ্তম শতকের ভুবনবিখ্যাত সূফি শেখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর আওলাদ তিনি। পারস্য থেকে হিজরত করে এ দেশে এসে তাঁর আওলাদবর্গ আস্তানা গেড়েছেন বলে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সোরাওয়ার্দী তাঁর ‘দস্তান-ই-ইবরাতবার’ নামক আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন। ১৯৯০ সালে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নামক একজন লেখক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দীর বিশদ বিবরণে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত সে গ্রন্থটি বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। মৌলিক এবং অনুবাদ মিলিয়ে তাঁর ৪০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, বর্তমানে একাধিক কপি পাওয়াই হাতির পাঁচ পা দেখার মতো!

২. খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ: ১৮৯৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগে এম.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া খান বাহাদুর আহসানউল্লাহের ব্যাপারে কম-বেশ সকলেই জানেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য কর্মজজ্ঞের সংক্ষিপ্ততর ফিরিস্তি দিচ্ছি।

ইংরেজ সরকারের পূর্ববঙ্গ জোনের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মাত্র এক মাস পর কলকাতায় মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইসলামিয়া কলেজ’। মুসলমান ছাত্রদের থাকার জন্যে কলকাতা এবং চট্টগ্রামে একাধিক হোস্টেল-ভবন তিনি এককভাবে নির্মাণ করেন, যান বিস্তারিত বয়ান এখানে করছি না।

তাঁর একক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উল্লেখযোগ্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো:

মুসলিম হাইস্কুল, চট্টগ্রাম (১৯০৯)

মাধবপুর শেখ হাই স্কুল, কুমিল্লা (১৯১১)

রায়পুর কে.সি হাই স্কুল (১৯১২)

চান্দিনা পাইলট হাই স্কুল, কুমিল্লা (১৯১৬)

কুটি অটল বিহারী হাই স্কুল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া (১৯২০)

চন্দনা কে.বি হাই স্কুল, কুমিল্লা (১৯২০)

চৌদ্দগ্রাম এইচ.জে পাইলট হাই স্কুল (১৯২১)

এবার সামান্য ধারাবিবরণী শুনুন। মাদরাসা থেকে ম্যাট্টিক পরীক্ষায় পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হবার কোনো সুযোগ ছিল না; মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীর জন্য এ প্রতিবন্ধকতার শিকল ভাঙেন তিনি। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের দাঙ্গার রেশ ধরে খাতার নাম দেখে পরীক্ষার খাতায় নম্বর বণ্টনে সাম্প্রদায়িকতার প্রবল সম্ভাবনা থাকায়, খাতায় নামের বদলে রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখার প্রচলন করেন তিনি। ইংরেজ সরকারের সিনেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম বিল খসড়া উপস্থাপিত হবার পর অখণ্ড বাংলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা নিয়ে যে নোংরা রাজনীতি শুরু হয় তার প্রতিক্রিয়ায় ইংরেজ সরকার একটি স্পেশাল কমিটি গঠন করে, যে কমিটিতে একমাত্র মুসলিম শিক্ষাবীদ হিসেবে সদস্য ছিলেন খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এক দশকেরও বেশি সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোটের (বর্তমান সিনেট) মেম্বার তিনি। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিকল্পে ড. নাথানের অধীনে Teaching কমিটিরও মেম্বার ছিলেন। বাঙালি-মুসলমানের শিক্ষার অগ্রসরতায় খান বাহাদুর সাহেব কতটা অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন তা নিয়ে একাধিক মোটা আকারের গ্রন্থ রচিত হয়েছে, আগ্রহীগণ রকমারিতে দেখতে পারেন। একবাক্যে বলতে হলে, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহর প্রজ্বলিত শিক্ষাকুণ্ডলির মাধ্যমেই মূলত বাঙালি-মুসলমানের অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে আলোর প্রাথমিক সঞ্চার হয়েছে। তাঁর সূফিত্ব নিয়ে নতুন করে আর কিই বা বলার আছে!

৩. ড. মুহম্মদ শহীদল্লাহ্: ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে আবির্ভূত হলেও তিনি বাঙালি-মুসলমানের শিক্ষা-সংস্কারে সারাজীবনব্যাপী কাজ করেছেন। তাঁর রচনাবলিতে প্রাপ্ত অভিভাষণসমগ্র থেকে জানা যায়, বাঙালি-মুসলমানদেরকে শিক্ষার ময়দানে লড়াকু সৈনিক হিসেবে যোগদানের জন্য আহ্বায়ক এবং উদ্বুদ্ধকারক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আর বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের বেশ কয়েক বছর পূর্ব থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা থেকে বাতিল করার জন্য যে ষড়যন্ত্র শুরু হয় তা বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে নস্যাৎ করে দেন তিনিই। বাংলা একাডেমির দিকে তাকালেই তাঁর অমরত্ব সম্বন্ধে আর বিশেষ কিছু বলার দরকার পড়ে না। এখন, তিনি কিভাবে সূফি?

হযরত শাহজালালের নির্দেশে বর্তমান উত্তর চব্বিশ পরগনায় ইসলামপ্রচারে গিয়েছিলেন পীর গোড়াচাঁদ। পীর গোড়াচাঁদ ছিলেন শাহজালাল নির্দেশিত ২১জনের দলনেতা। তাঁর সাথে তৎকালীন দেবালয়ের রাজা চন্দ্রকেতু ধর্মযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। চন্দ্রকেতুর অনুরোধ-অনুসারে তিনি রাজপ্রাসাদের চারদিকে লোহার বেড়ায় চাপা ফুল ফুটিয়েছিলেন, কিংবদন্তি অনুসারে সে জায়গাকে আজও লোকজন ‘বেড়াচাপা’ বলে চিনেন। চন্দ্রকেতুর সাথে পীর গোড়াচাঁদের ধর্মযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বহু ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা আছে। এখন সেদিকে যাচ্ছি না। পীর গোড়াচাঁদের সঙ্গেই তাঁর একজন খাস-খাদেম ছিলেন, যার নাম ‘শেখ দারা মালিকী’। এ বংশের সন্তানগণই পরবর্তীতে অধস্তন-অনুসারে পীর গোড়াচাঁদের দরগাহের খাদেম হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন এবং স্থানীয় পরিবেশমণ্ডলে ‘খাদেম বংশ’ বলে প্রসিদ্ধি পেয়েছেন। এ খাদেম বংশেই জন্মেছেন আমাদের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। (ড. সাহেব হায়াতে থাকাকালীন ১৯৬৭ সালে তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্তবৃন্দ তাঁকে উৎসর্গ করে একটি সংবর্ধনা গ্রন্থ বের করে, “শহীদুল্লাহ্ সংবর্ধনা-গ্রন্থ” নামে; সে-গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিশদ বিবরণ আছে।) ড. সাহেব ফুরফুরা শরীফের পীর-সাহেব হযরত আবু বকরের নিকট সরাসরি বায়আত হন এবং কয়েক বৎসর পর ফুরফুরা শরীফের খেলাফত লাভ করেন। এ সম্পর্কে তাঁর আত্মস্মীকৃতি এখনও বেশ সুলভ।

এভাবে আরও অনেক সূফি-মনীষী আছেন যারা বাঙালি-মুসলমানের অন্ধকারাবদ্ধ সমাজে শিক্ষার আলো প্রজ্বলন এবং প্রসারে জীবনভর কাজ করে গেছেন। উল্লেখযোগ্য এমন একজন, মাওলানা আবু নাসের ওহীদ। যাঁর একক প্রচেষ্টাতেই ১৯১৫-১৬ সালের দিকে সাধারণ মাদ্রাসাগুলোকে আধুনিক শিক্ষায় উন্নীত করতে ‘নিউ স্কিম মাদরাসা’ নামক একটি আধুনিক ধারার প্রবর্তন হয়। অর্থাৎ, এ ধারায় মাদরাসায় কেবল আর আরবি-ফারসি শিক্ষাতেই সীমাবদ্ধ থাকলো না, বাংলা, ইংরেজি প্রভৃতি শিক্ষার সমন্বয়ে মাদরাসা-শিক্ষার্থীরাও আধুনিক শিক্ষার স্বাদ পেতে লাগলো। ১৯৩৭-৩৮ সনে তিনি আসামের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন; তিনি ছিলেন একজন সূফিভক্ত, ঢাকাস্থ নারিন্দার শাহ আহসান উল্লাহ রহ. এর মুরিদ ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে এই আবু নসর সাহেব একটি তহবিল গঠন করেন। জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয় হচ্ছে, সে তহবিলে নারিন্দার পীর সাহেব শাহ আহসান উল্লাহও ৩০০০ টাকা দান করেছিলেন। এটা কোনো উড়ো খবর নয়; ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত “জালালাবাদের কথা” গ্রন্থে এ তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। ঢাকার প্রথম বেসরকারী কলেজ, “শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ”-ও ওয়েসিয়া দরবার শরীফের পীর, মাওলানা শেখ বোরহানুদ্দীন রহ. এর প্রতিষ্ঠিত। আরও কত কত তথ্য যে ইতিহাসের ভাগাড়ে ধূলিকণার ছদ্মাবরণে চাপা পড়ে আছে তার কি কোনো ইয়ত্তা আছে!

যারা বাঙালি-মুসলমানের অশিক্ষা-কুশিক্ষা এবং লৌকিক ধর্মভীরুতার পেছনে বঙ্গবাসী সূফিদেরকে দায়ী করতে উদগ্রীব তাদের জবানে এগুলোর তেলাওয়াত কখনোই শোনা যায় না, যাবেও না। চাপা পড়া ইতিহাস যাদের গৌরববৃদ্ধিতে এবং মানসনির্মাণে কাজে লাগে তাদেরকেই সে-ইতিহাসকে বহুলপ্রচারের মাধ্যমে সুরক্ষা করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি তার অনুসরণ না করা যায় তাহলে সে-ইতিহাস যক্ষের ধনের মতো সিন্দুকবদ্ধ করে রাখাতে কোনো ফায়দা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *