নরপিশাচ ভ্লাদ ও উন্মাদ সেনাবাহিনী দেলিলুর
নরপিশাচ ভ্লাদ ও উন্মাদ সেনাবাহিনী দেলিলুর -প্রাচীন ইতিহাস ও উপন্যাস যে যুগের সন্ধানে আমাদের নিয়ে যায় সেখান থেকে জানা যায় যে, উসমানীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার লক্ষে ১৪০৮ সালে একটি গোপন সংঘ প্রতিষ্ঠিত করা হয় যার নাম “অর্ডার অফ দ্য ড্রাগন” এর প্রতিষ্টাতা হিসেবে যার নাম পাওয়া যায় সে হলো Sigismund of Luxembourg (15 February 1368 – 9 December 1437)। এই সংগঠনের সাথে এক ভয়ানক পিশাচ জড়িত ছিলো যার নাম কাউন্ট ভ্লাদ। যার ইতিহাস অত্যান্ত জঘন্য। ইতিহাস আর উপন্যাস মিলিয়ে অনেকটা ঘোলাটে। সন’ ১৪৩১ ঈঙ্গাব্দ, কার্পেথিয়ান পর্বতমালার কোলে অবস্থিত ট্রানসিলভানিয়ার দক্ষিণে ওয়ালেসিয়া রাজ্যে যুবরাজ তৃতীয় ভ্লাদ জন্ম নেয়। ‘অর্ডার অফ দ্য ড্রাগন ‘ সংঘ হতে তাকে ‘ড্রাকুল’ উপাধি দেয়া হয়। প্রাচীন ওয়ালেসিয়ান ভাষায় ড্রাকুলা শব্দের অর্থ ড্রাগনের সন্তান! আবার রোমানিয়ায় একই শব্দের অর্থ বদলে হয়ে যায়, শয়তানের সন্তান! পিতৃসূত্রে প্রাপ্ত এই ড্রাকুলা উপাধিই পরে ভয়ংকর জীবন্মৃত এক শয়তানের প্রতীকে পরিণত হয়। আর টেপেস/ ইমপেলার (শূলবিদ্ধকারী) উপাধি লাভ করে নিজ কৃতকর্মের গুণেই!ইউরোপীয় খ্রিস্টান রাজশক্তি আর উসমানীয়দের মাঝে তখন তীব্র সংঘাত । উসমানীয়রা কাউন্ট ভ্লাদ’র রাজ্য দখল করে নেয় এবং ৩য় ভ্লাদ এবং তার ছোটভাই রাদুকে বিশ্বস্ততার স্বরূপ হিসেবে কনস্টান্টিনোপল পাঠিয়ে দেয়া হয়। রাদু একসময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্ত ৩য় ভ্লাদ বা ড্রাকুলা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করেই কুরআন, হাদিস, দর্শন, বিজ্ঞান, অস্ত্রশিক্ষায় দীক্ষা নিতে থাকেন। ১৪৪৭সালে ভ্লাদ’কে অপরাধের শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা হলে ৩য় ভ্লাদ তখন হিংস্র হয়ে উঠে। এ ছাড়া ছোট থেকেই তার মস্তিষ্ক ধাবিত হয় শয়তানের দিকে। নিজেকে ধীরে ধীরে সে হিংস্র করে তোলে। ক্রোধান্বিত ভ্লাদ তখন থেকেই মূলত নিজেকে ‘ভ্লাদ ড্রাকুলা’ বা ‘ড্রাগনের সন্তান’ বলে পরিচয় দিতে থাকে। তার প্রথম স্ত্রী দুর্গের উপর থেকে আর্গেস নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরবর্তীতে শিশু,বৃদ্ধ, মহিলা হতে নিয়ে কেউ রেহায় পায়নি তার নির্মমতা থেকে। কোনো অভিযানে যাওয়ার সময় সে শহরের দু’পাশে পঁচা, গলা লাশ ঝুলিয়ে রাখতো। ১৪৬২’ সালে, উসমানীয় সুলতান মুহাম্মদ (২য়) ফাতিহ যখন তার বিরূদ্ধে অভিযানে যান তখন এক শহুরে ২০হাজার লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়, সুলতান তা দেখে অস্বস্তি বোধ করেন এবং সেখান থেকে ফিরে যান। আরেকটি সূত্র অনুযায়ী হামজা বে’র নেতৃত্বে ১৪৫৯’সালে বিশাল সৈন্যদল পাঠানো হয়। সুলতান’কে যিযিয়া (কর) দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় এ আক্রমণ করা হয়। কিন্ত ভ্লাদ হামযা বে সহ ২০হাজার সৈন্যদল’কে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে। ঘটনার সাক্ষী সে স্থানটি ‘দ্য ফরেস্ট অফ ইমপেলড’ নামে পরিচিত।সেই সময়কালে উসমানীয়দের বিজয়ের পতাকা সব জায়গায় উড়তে শুরু করেছিলো এবং ভূমিসমূহ প্রসারিত হচ্ছিলো এমন সময় একটি নতুন সামরিক শ্রেণির উত্থান ঘটে যা রুমেলিয়া সীমান্তে শত্রুদের সন্ত্রস্ত/ভয়ে অভিভূত করে তোলে। লোকেরা এই নতুন অশ্বারোহী সেনাদের “দেলিলুর” নামে অভিহিত করে, যাদের চেহারা এবং পোষাক শত্রু সৈন্যদের অন্তরে ভয় সঞ্চার করে দিতো। তারা গেরিলাদলের মতো হাওয়ার বেগে এসে এক নিমিষে শত্রুদের ধরাশায়ী করে দিতো। তাদের চেহারা জুড়ে হিংস্র ছাপ স্পষ্ট ছিলো। তাদের পড়নে থাকতো বিভিন্ন হিংস্র পশুর চামড়া। একটি ক্ষুদ্র শাসনব্যবস্থা থেকে বিশ্ব সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত করা, উসমানীয় সাম্রাজ্যের বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল এর নিয়মতান্ত্রিক সেনাবাহিনী। এই সেনাবাহিনীর সমস্ত সৈন্য যুদ্ধকে ইসলামের সেবা হিসাবে দেখেছে এবং তাদের ভাষ্য এটি থাকতো যে,”যদি আমরা মারা যাই আমরা শহীদ হই, যদি বেচে থাকি তবে আমরা গাজী হই”এই বিশ্বাস নিয়ে তাঁরা যুদ্ধে যোগ দিতো এবং অসাধারণ সাফল্য প্রদর্শন করতো। জনসাধারণ এই সৈন্যদের চিনতো “দেলিলুর” বা উন্মাদ/পাগল নামে।১৪৭৬’সালে সুলতান মুহাম্মদ (২য়) ফাতিহ’র নেতৃত্বে ছুটে চলে অশ্বারোহী দেলি (দেলিলুর) বাহিনী। উসমানীয় দেলি বাহিনী অবশেষে ড্রাকুলা বাহিনীর সাথে যুদ্বে জয়ী হয়। নরপিশাচ ৩য় ভ্লাদ (ড্রাকুলা)’কে হত্যা করে মাথা কেটে নিয়ে কনস্টান্টিনোপলের দরজায় কয়েক মাস শূলবিদ্ধ করে রাখে। “উসমানীয় সাম্রাজ্য” প্রসারে দেলিলুর বা দেলী বাহিনী’র বিরাট ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।রেফারেন্সঃHoutsma, Martijn Theodoor, ed. (1987). “Deli”. First Encyclopaedia of Islam. E.J. Brill’s first encyclopaedia of Islam, 1913–1936, Volume II: Bābā Fighānī–Dwīn. Leiden: BRILL. ISBN 90-04-08265-4.Erickson, Edward J.; Uyar, Mesut (2009). Military History of the Ottomans: From Osman to Atatürk. ABC-CLIO. ISBN 978-0313056031. “Sigismund | Holy Roman emperor”. Encyclopedia Britannica. Retrieved 2020-04-09.^ “Sigismund | Encyclopedia.com“. www.encyclopedia.com. Retrieved 2020-04-09.^ “Historical Text Archive: Electronic History Resources, online since 1990- Dailysabah.comঅনুবাদ ও সম্পাদনা -শেখ মঈনুল আজাদসংরক্ষিত ২৩-০৬-২০২১