দেবীদ্বারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে খোলা আকাশের নিচে নিঃস্ব ১৪ পরিবার; কণের বিয়ে অনিশ্চিত
মোঃ মাসুদ রানা ঃ দেবীদ্বারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১৪ পরিবারের ১৯টি ঘর পুড়ে ছাই হয়েগেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলার ধামতি ইউনিয়নের উত্তরপাড়া রহমান শাহ মাজার মার্কেট সংলগ্ন আবুল হোসেন সরকার বাাড়িতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এক অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।ক্ষতিগ্রস্থরা জীবন বাঁচাতে গৃহত্যাগের সময় শুধুমাত্র পড়নের কাপড় ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। এসময় অন্তত: ৭জন নারী, পুরুষ ও শিশু আহত হন। অগ্নিকান্ডে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টাার দিকে তাজুু মিয়াার ঘরের বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত ঘটে। ঘনবসতি হওয়ায় মুহুুর্তে মধ্যে অগ্নিকান্ডের লেলিহান শিখা আশ পাশের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যে ১৪টি পরিবারের একটি টং দোকান সহ ১৯টি ঘর এবং ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্নালংকার, কাপড় চোপর-আসবাব সামগ্রী, ধান, চাউল, ফ্রীজ, গ্যাস সিলিন্ডার, রান্না করা খাবার, স্কুল- কলেজ, মাদ্রাসায় পড়–য়া প্রায় ২৫ শিক্ষার্থীর বই-খাতাসহ সমস্ত শিক্ষার উপকরণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নিকান্ডে তাজু মিয়া’র সন্তানের মতো আদরে লালন পালন করা একটি ছাগল এবং আবু কাউছারের ১০ জোড়া সখের কবুতরও পুড়ে ছাই হয়ে যায়।রোববার সকালে সরেজমিনে ওই বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, ঘরগুলোর পাকা পিলারগুলো দাড়িয়ে ঠায় আছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের নারী-শিশুদের আর্তনাদ করতে দেখা যায়। অশিতিপরায়ন বৃদ্ধা আলী আজগর পোড়া ঘরের দিকে তাকিয়ে নির্বাক দাড়িয়ে আছেন। অগ্নিকান্ডে নিঃশ^ দিনজুর বাবুল মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগম আর্তনাদ করে বলেন, আজ আমি নিঃস্ব আমার প্রতিবন্ধী শিশুপুত্র আর বিবাহযোগ্য কণ্যাকে নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেব ? মেয়ের বিয়ের কথা চলছিল, আগামী শুক্রবার বিয়ের দিনক্ষন চুড়ান্ত করার কথা ছিল। সবই অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।স্থানীয় ইউপি মেম্বার জামাল হোসেন বলেন, অগ্নিকান্ডের পরপরই বিদ্যুৎ বিভাগকে ফোন করা হলেও কোন রেসপন্স পাইনি, ধামতী বাজারের একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান কৌশলে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্থানীয় ড্রেজার আক্তার’র তার ড্রেজার মেসিনের সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করেন, সংবাদ পেয়ে রাত সোয়া ৮টায় চান্দিনা এবং মুরাদনগর ফায়ার সার্ভিসের দুইটি টিম এসে আগুন নিয়য়ন্ত্রনে আনে। অপরদিকে গৃহ নির্মানের পূর্ব পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থদের খাবারের দায়িত্ব নেন ধামতী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন মিঠু।বাবুল মিয়া জানান, এলাকার অনেক মানুষ এসেছেন আমাদের সহযোগীতায় এর মধ্যে কেউ কেই এসেছেন চুরি করতে। আমি ঘর থেকে কিছু মালামাল বাহির করতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে ওই মালগুলো আর খুঁজে পাইনাই, আগমনের সংবাদে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা স্বজনদের বহনকরা দু’টি অটোরিক্সা এবং একটি সিএনজির বেটারী চুরি করে নিয়ে যায়।ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারগুলো হলেন, মোখলেসুর রহমান, তাজুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল, মোঃ হোসেন মিয়া, মোঃ বাবুল মিয়া, মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ জহির মিয়া, মোঃ ফুল মিয়া, মোঃ আবু কাউসার আহমেদ, মোঃ শাজাহান মিয়া, রাবেয়া বেগম, মোঃ তমিজ উদ্দিন, জাহানারা বেগম, ইব্রাহীম খলিলসহ ১৪ পরিবারের ১৯টি বসত ঘর।অগ্নিকান্ডের সংবাদে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশিক-উন-নবী তালুকদার, দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা গোলাম মাওলা, ধামতী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন মিঠু এবং রোববার সকালে ঘটনাস্থ পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে শান্তনা দিতে ছুটে যান জাতীয়তাবাদী মহিলা দল কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ’র সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া বেগম’র নেতৃত্বে দেবীদ্বার পৌর কমিশনার ও কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা দলের সহ-সভাপতি মাহমুদা খানম, মহিলাদল পৌর সাধারন সম্পাদক শিল্পী আক্তার, বিএনপি, যুবদল, ছাত্র দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এসময় ক্ষতিগ্রস্থ উন্নয়ন তহবিলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ’র সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া বেগম ১০ হাজার টাকা সহায়তা দান করেন।অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের তাৎক্ষনিক সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশিক-উন-নবী তালুকদার বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনী সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের তথ্যানুযায়ী ৪৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারনা করা হচ্ছে। আজ গৃহহীনদের দ্রæত গৃহায়নে ত্রাণ পুনর্বাসন মন্ত্রনালয়ে জরুরী প্রস্তাব পাঠিয়েছি।