দেবীদ্বারে টানাবর্ষণে কৃষকদের স্বপ্ন ভাঙ্গার আর্তনাদ; ২,৬৮১ হেক্টর ফসলের ১,৩৯৮ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত

Spread the love

এবিএম আতিকুর রহমান বাশার: অসময়ে ঘূর্ণীঝর জাওয়াদ’র প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেবীদ্বার এলাকায় গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ২ হাজার ৬৮১ হেক্টর জমির আবাদী ফসলের মধ্যে ১হাজার ৩৯৮ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রৌফ।

মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ফসলী জমির পানি নিষ্কাসনে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সমস্যা হল অধিকাংশ খালের অংশ ভরাট ও বেদখল হওয়ার কারনে পানি সরাতে পারছেননা। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শাক-সব্জী আবাদী কৃষকদের সম্ভাবনাময়ি স্বপ্ন এখন পানির নিচে। আলুর মাঠ এখন পানির নিচে, পানি সরে গেলেও এ আলু আর উৎপাদনে যাবেনা। অসময়ে টানা বৃষ্টির ফলে তাদের ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি সরকারের সহযোগীতা ছাড়া পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তবে বেশী দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এলাহাবাদ ইউনিয়নের কৃষকদের দেখা যায় পানির নিচ থেকে তুলে আনা ধান সড়কের উপর স্তুপ দিচ্ছেন। সুকানোর কোন ব্যবস্থা নেই বলে জানান তারা।

এছাড়াও অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, বাজার ও বিপণী কেন্দ্রগুলোতে ক্রেতার সমাবেশও কমেগেছে। উপজেলা সদরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার অপ্রতুল ও যেগুলো আছে সেগুলোতে জমে থাকা ময়লা আবর্জণাগুলো পরিস্কার না করায় তিন দিনের টানা বর্ষনের ফলে উপজেলা সদরের সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জরুরী প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষগুলোর ড্রেনের বিসাক্ত ময়লা আবর্জনার পানি পায়ে লাগার পর চুলকানীসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আগাম শীতকালীন সব্জী, মাছের ঘের, পুকুর ও রবি ফসলের চাষিরা। অধিকাংশ ক্ষেতের সব ফসল মাটির সাথে মিশে গেছে। ফসলের এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না অনেক কৃষক। এছাড়া এবার শাক-সব্জীর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকরাও বুকে বেঁধেছিলো রঙ্গীন স্বপ্ন। কিন্তু হঠাৎ এই বৃষ্টিতে কৃষকের বুক ভরা স্বপ্ন এক নিমেশেই ভঙ্গ হয়ে গেছে। এখন শুধুই রয়েছে হতাশা।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রৌফ জানান, অসময়ে ঘূর্ণীঝর জাওয়াদ’র প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের কারণে চলতি মওসুমে অতিবৃষ্টির কারনে দেবীদ্বারে ১ হাজার ৬৮১ হেক্টর রবি, শাকশব্জী ও বীজ তলায় আবাদী ফসলের ১৩৯৮ হেক্টর কৃষিজমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে,- বোর বীজতলা- ৪৪৫ হেক্টর আবাদী জমির মধ্যে – আক্রান্ত- ২২৮ হেক্টর, গোল আলু আবাদ- ১ হাজার ২৫ হেক্টর’র মধ্যে আক্রান্ত- ৬৩০ হেক্টর, ধনিয়া পাতা- ৮৫ হেক্টর’র মধ্যে আক্রান্ত- ৪০ হেক্টর, পেঁয়াজ- ২০ হেক্টর’র মধ্যে আক্রান্ত- ২০ হেক্টর, রসুন- ১০ হেক্টর’র মধ্যে আক্রান্ত- ১০ হেক্টর, ভুট্টা ১৭ হেক্টরের মধ্যে আক্রান্ত- ১০ হেক্টর, গম ১৪ হেক্টরের মধ্যে আক্রান্ত- ১০ হেক্টর এবং শাক সব্জী- ৯৬৪ হেক্টরের মধ্যে আক্রান্ত ৩৬৫ হেক্টর। এগুলোর মধ্যে আবাদী ফসল ছিল,- মিষ্টি আলু- ১৫ হেক্টর, ফুল কপি- ১৫০ হেক্টর, বাঁধা কপি- ১৮৫ হেক্টর, বেগুন- ৮০ হেক্টর, টমেটো- ৯৫ হেক্টর, মুলা- ৬৬ হেক্টর, লাল শাক- ৮২ হেক্টর, ডাটা- ৬২ হেক্টর, পালং শাক- ২৬ হেক্টর, শষা- ৫০ হেক্টর, মিষ্টি কোমড়া- ৯৮ হেক্টর, করলা- ৪০ হেক্টর, ঢেরস- ৫০ হেক্টর।

তিনি আরো জানান, প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও ঝরোবাতাস না থাকার কারনে ধানী ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি, যে ধানগুলো কাটার পর কৃষকরা জমিতে রেখেছিলেন সেগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার পেঁয়াজ, রসুন শতভাগ আক্রান্ত হয়েছে। তার পর গোল আলু। তাছাড়া বৃষ্টিপাত আরো অব্যাহত থাকলে আক্রান্ত ফসলের পরিমান আরো বাড়বে। আমরা আবাদী ফসলের লক্ষমাত্রা এবং আক্রান্ত ফসলে তালিকা ও পরিমান মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *