টানা বৃষ্টির ফলে চৌদ্দগ্রামে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

Spread the love

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতে আমন, বোরো, আবাদি শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত রবিবার সকাল থেকে সৃষ্ট গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। টানা বৃষ্টিতে সড়ক-মহাসড়ক, বাজার-ঘাটে মানুষের চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। পাকা আমন ধান, বোরোর চারা রোপনে ব্যস্থ সময় পার করা উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ শ্রমিকের কাজ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ইটভাটায় কাজ করা হাজার হাজার শ্রমিকের কাজ। এতে করে বিপাকে পড়েছে চৌদ্দগ্রামে কাজ করতে আসা উত্তরবঙ্গের হাজার হাজার শ্রমিক এবং স্থানীয় নি¤œআয়ের মানুষ। জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ হতে পারে। তবে হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে বলেও আশংকা রয়েছে। টানা বৃষ্টির ফলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে শত শত হেক্টর পাকা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে কাটা ধান গাছসহ পানিতে হেলে পড়েছে। অনেকাংশে ধানসহ গাছ পানির নিছে পড়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলায় অন্তত কয়েকশ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা রোপন হয়েছে। অনেক স্থানে চারাগাছ লাগানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কৃষক। সৃষ্ট বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে বোরোর চাষাবাদও। শুধু আমন কিংবা বোরো নয় ক্ষতির মুখে পড়েছে ক্ষেতে থাকা শাকসবজিও। উপজেলার কয়েক’শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হওয়া বরবটি, লাউ, বেগুন, ধনিয়া, লালশাক, মরিচের চারাসহ বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে সৃষ্ট বৃষ্টিপাত। কনকাপৈত ইউনিয়নের করপাটি গ্রামের আবু বকর জানান, তিনি ১৭৫ শতক জমিনে আমন ধান চাষাবাদ করেছেন যা কাটার উপযুক্ত হয়েছে। চলমান বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ ধানগাছ মাটিতে নূয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে ভেঙ্গেপড়া ধানগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন তিনি। এছাড়াও তিনি বাড়ির পাশের ৩০ শতক ভিটি জমিনে বরবটি, লাউ, বেগুনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করেন। টানা বৃষ্টিপাতে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই অধিকাংশ সবজি গাছ মরে যাওয়ারও আশংকা করছেন তিনি। এছাড়াও উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামের কৃষক মর্তুজা মজুমদার বাড়ির পাশের ৬শতক ভিটি জমিনে ধনিয়া, বেগুন, মরিচ এবং কুমড়া চাষ করেন। টানা বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় তিনিও ব্যাপক ক্ষতির মূখে পড়েছেন বলে জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: নাছির উদ্দিন জানান, এ বছর আমন মৌসুমে ধানের ভালো ফলন হয়েছে। গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টিপাতে উপজেলায় অন্তত ১০০ হেক্টর জমিনে পানি উঠেছে। এতে করে অনেকস্থানে পাকা ধান গাছসহ হেলে পড়েছে। ফলে আমন চাষ করা কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে বৃষ্টি বন্ধ হলে আমন এবং বোরোর ক্ষয়ক্ষতি খুব একটা হবেনা। অন্যথায় কৃষকরা ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি আরও জানান, উপজেলায় চলমান মৌসুমে ৩৫০ হেক্টর জমিনে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৯৪ হেক্টর সরিষা পানির কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের ফলে আমনের সামান্য ক্ষতি হলেও রবিশস্যের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না বলেও তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *