করোনাকালে চাঁদপুরে চামড়ার ক্রেতা নেই : দান করা হচ্ছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে

Spread the love

মোহাম্মদ বিপ্লব সরকার : করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় বহু মানুষ পশু কোরবানি দিয়েছেন। কিন্তু কোরবানির গরু ও ছাগলের চামড়া কিনতে এবারে বাসা-বাড়িতে তেমন ক্রেতা আসেনি। ছাগলের চামড়ার ক্রেতা একেবারেই নেই। ফলে শেষমেশ বাধ্য হয়ে লোকজন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এসব চামড়া দান করে দিচ্ছেন। মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো থেকে স্বল্প মূল্যে সেসব চামড়া কিনে নিচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ১ আগস্ট শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর শহরের পালবাজার চামড়ার পাইকারি আড়তে গিয়ে দেখা যায়, সংগৃহীত চামড়ার স্তূপ। সেখানেই শহরের সব চামড়া কনার জন্য আছেন ৫ ব্যবসায়ী। তারাই আগামী ৩ দিন এলাকার সব চামড়া কিনবেন বলে জানিয়েছেন। কোরবানি দিলেও পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারেননি শহরের মাদ্রাসা রোডের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি জানান, কোরবানির জন্য ৭৪ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। ঈদের নামাজের পর সেই গরু কোরবানি দিলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত চামড়া কিনতে কেউ আসেননি। বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় বাসস্ট্যান্ড মাদ্রাসা ও এতিমখানায় খবর দিয়ে চামড়াটি দান করে দিয়েছেন তিনি। শহরের নিউ ট্রাক রোডের বাসিন্দা জহির শেখও একই কথা জানান। তার পশুর চামড়া কিনতেও কেউ আসেনি। তিনি বাগাদী ইসলামপুর গাছতলা মাদ্রাসায় চামড়া দান করেছেন। শহরের পুরান বাজার এলাকার একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, এ বছর খুচরা কোনো চামড়া বিক্রেতা মাঠে ছিল না। যার কারণে মানুষ পুরান বাজার জাফরাবাদ ও এমদাদিয়া মাদ্রাসায় অধিকাংশ চামড়া দান করে দিয়েছেন। মাদ্রাসার ছাত্ররা এসব চামড়া একত্রিত করে পাইকারি বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী এলাকার বাসিন্দা ঝন্টু পাটওয়ারী জানান, তারা দুটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। এক ক্রেতা এসে ১শ’ টাকা করে দু’টি চামড়ার জন্য ২শ’ টাকা দিতে চেয়েছেন। পরে চামড়াগুলো তার কাছে বিক্রি না করে মাদ্রাসায় দান করা হয়েছে। জেলার কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর ও হাজীগঞ্জ উপজেলার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহর ও সদর এলাকার মতই এসব এলাকাতেও একই অবস্থা। খুচরা বিক্রেতারা মাঠে না থাকায় অধিকাংশ মানুষই মাদ্রাসা ও এতিমখানায় চামড়া দান করেছেন। চাঁদপুর শহরের পালবাজারের চামড়া ব্যবসায়ী মো. জহির হোসেন বলেন, এ বছর কোনো খুচরা বিক্রেতা চামড়া কিনতে মাঠে নামেননি। এ কারণে মাদ্রাসা এতিমখানার লোকজনই সব চামড়া একত্রিত করে বিক্রি করছেন। তিনি বড় চামড়া ৭শ’ টাকা দরে ও মাঝারি সাইজের চামড়া ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন বলে জানান। একই বাজারের আরেক চামড়া ব্যবসায়ী আকবর গাজী বলেন, এ বছর ভালো দামে চামড়া পেয়েছেন। যদি ঢাকার বড় ব্যবসায়ীরা কোনো সিন্ডিকেট তৈরি না করে নগদ এসব চামড়ার মূল্য পরিশোধ করে, তাহলে সব খরচ মিলিয়ে তাদের লোকসান হবে না। প্রায়শই দেখা যায়, ঢাকার ব্যবসায়ীদের ৩০ লাখ টাকার চামড়া দিলে ৫ লাখ নগদ দিয়ে ২৫ লাখই বাকি রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *