নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষী ও জংগীদের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন
সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারি: নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী এবং জংগীবাদী হুজুরেরা উভয়েই দাবী করে, কুরআন মাজিদের ভিন্ন ভিন্ন সূরাতে আসা সকল ধর্মের মানুষের মাঝে শান্তি স্থাপনকারী ও পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকারী কমপক্ষে ১০ খানা আয়াত, সকল আয়াতের হুকুম নাকি মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে সূরা তওবার শুরুর ৩ আয়াতের মাধ্যমে। উভয়েই ইসলামকে যুদ্ধবাজ ও অশান্তির ধর্ম হিসেবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে চায়। নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীদের উদ্দেশ্য তো বুঝি। ইসলামকে বদনাম করতে চায় তারা অমুসলিমদের কাছে, যেন মানুষ ইসলাম গ্রহণ না করে। অথবা এই কথাগুলোর মাধ্যমে মুসলমানদের বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষিত ভাই বোনদের কাছে ইসলামকে বিতর্কিত করে তুলে ধরতে চায়৷ যেন মানুষ আস্তে আস্তে ইসলামকে ঘৃণা করে ইসলাম থেকে দূরে সড়ে যায়। কিন্তু আপনারা জংগীবাদী হুজুরেরা ইসলামকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাচ্ছেন? আমাদের আকল কখন ঠিকানায় আসবে? অস্ত্রের জিহাদ শুধু সেসব অস্ত্রধারীদের সাথে যারা বাস্তবে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত আছে, অথবা আপনার আমার দেশকে নিশ্চিতরুপে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে৷ বাকি সবার সাথে শান্তি বজায় রাখা ফরজ। নিরপরাধ সাধারণ মানুষ যে নিরস্ত্র, সে মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম তাকে হত্যা করা যাবে না, বৃদ্ধ, শিশু, নিরস্ত্র মহিলা, বিভিন্ন ধর্মের ধর্মযাজক তাদের গায়ে হাত তোলা যাবে না। কারো ধর্মীয় স্থাপনা, ফসল, গাছপালা ইত্যাদি ধ্বংস করা যাবে না। এগুলো জিহাদের একদম মৌলিক ক্রাইটেরিয়া । আমাদের প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. সুস্পষ্টভাবে সেনাপতিদেরকে যুদ্ধে পাঠানোর আগে সেনাপতির কাঁধে হাত রেখে হেটে হেটে সেগুলো বুঝিয়ে দিয়েছেন তোতা পাখির মত৷ তারপর যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছেন।যদি এর বাহিরে দু একটি বিচ্ছিন্ন ব্যতীক্রমী ঘটনা থাকে তবে সেদিকেই ফিরে যেতে হবে যে, “ব্যাতীক্রমী কোনকিছু উদাহরণ হতে পারে না৷” কুরআন মাজিদে যত জায়গায় এসেছে, “মুশরিকদেরকে যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর” অথবা “তাদেরকে যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর” এই আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে যুদ্ধের ময়দানের আয়াত। যুদ্ধের ময়দানে অস্ত্রধারী যাকে পাও তাকে হত্যা কর। এটা কমন সেন্স৷ আর মুশরিক বলতে এই আয়াতগুলোতে মক্কার কাফির মুশরিকরা উদ্দেশ্য। যারা মুসলমানদেরকে তাদের নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে অত্যাচার অবিচার করে৷আর যেই সূরা তওবার শুরুর আয়াতগুলোর মাধ্যমে সকল অমুসলিমদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিষিদ্ধ হয়ে কেবল তলোয়ার রয়ে গেছে বলছেন, সেই সূরা তওবার ৩ আয়াত পর থেকে পড়ুন দয়া করে।হ্যাঁ, প্রথম ৩ আয়াত বাহ্যিকভাবে ইংগিত দেয় যে, মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক শেষ, বাকি থাকবে শুধু তলোয়ার। কিন্তু প্রতিটি চুক্তিরই প্রতিটি ক্লজের সাথে ifs and buts যুক্ত করে, যদি ও কিন্তু যুক্ত করে কিছু এক্সেপশন এনক্লোজার হিসেবে থাকে। আল্লাহ পাক প্রথম তিন আয়াতে মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে ৪ র্থ আয়াতে বলছেনঃ إِلَّا الَّذِينَ عَاهَدتُّم مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ثُمَّ لَمْ يَنقُصُوكُمْ شَيْئًا وَلَمْ يُظَاهِرُوا عَلَيْكُمْ أَحَدًا فَأَتِمُّوا إِلَيْهِمْ عَهْدَهُمْ إِلَىٰ مُدَّتِهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তি বদ্ধ, অতপরঃ যারা তোমাদের ব্যাপারে কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সাথে কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। অবশ্যই আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন। (৯ঃ৪) আবার ৬ নং আয়াতে বলছেনঃ وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّىٰ يَسْمَعَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ أَبْلِغْهُ مَأْمَنَهُ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْلَمُونَ আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না। (৯ঃ৬) সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও খুবই প্রাসঙ্গিক হচ্ছে ৭ নং আয়াত كَيْفَ يَكُونُ لِلْمُشْرِكِينَ عَهْدٌ عِندَ اللَّهِ وَعِندَ رَسُولِهِ إِلَّا الَّذِينَ عَاهَدتُّمْ عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۖ فَمَا اسْتَقَامُوا لَكُمْ فَاسْتَقِيمُوا لَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ মুশরিকদের চুক্তি আল্লাহর নিকট ও তাঁর রসূলের নিকট কিরূপে বলবৎ থাকবে। তবে যাদের সাথে তোমরা চুক্তি সম্পাদন করেছ মসজিদুল-হারামের নিকট। অতএব, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের জন্যে সরল থাকে, তোমরাও তাদের জন্য সরল থাক। নিঃসন্দেহের আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন। (৯ঃ৭)আমাদের প্রতিটি দেশ একে অপরের সাথে চুক্তিবদ্ধ। আমাদের প্রত্যেকটি দেশের প্রত্যেক নাগরিক সংবিধানের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে চুক্তিবদ্ধ৷ সেখানে কিভাবে আমরা এই চুক্তি লংঘন করব যতক্ষণ না তারা লংঘন করে? আবারো লক্ষ্য করুন, “অতএব, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের জন্যে সরল থাকে, তোমরাও তাদের জন্য সরল থাক। নিঃসন্দেহের আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন। (৯ঃ৭)” আর আজ আমাদের অল্প কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী মৌলভি সাহেবরা সুইসাইড বোম্বিংও জায়েজ করে ফেলার অপচেষ্টা করছেন৷ অথচ সুইসাইড বোম্বিং এ নিরপরাধ মানুষই বেশি মারা যায়৷ আর যেকোন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করা হারাম কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী তা বলাবাহুল্য৷ আল্লাহ পাক আমাদের উপরে খাস রহমত করুন৷ আমিন।