ওয়াজ কালচারের উপর গুরুত্ব কমিয়ে, জুমুয়ার বয়ানের দিকে গুরুত্ব দিন

Spread the love


সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারি: আমরা মসজিদের মিম্বরগুলো আস্তে আস্তে ছেড়ে দিচ্ছি৷ আমাদের সকল ফোকাস ওয়াজের মঞ্চের দিকে। কারণ সেখানে এত বেশি দুনিয়াবী জৌলুস যে স্বাভাবিকভাবেই মানুষকে তা আকর্ষণ করবে। ওয়াজ বিজনেসকে আমরা মিলিয়ন ডলারের একটা মার্কেট বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু যতই ওয়াজ করেন আর যাই করেন, একজন লোকাল ইমাম বা খতিবের যে প্রভাব নির্দিষ্ট ওই এলাকাতে আছে তা একজন ওয়ায়েজের নেই। এই বিষয়গুলো আমরা নজরে আনছি না এবং ব্যবস্থাও নিচ্ছি না যা খুবই আফসোসের বিষয়। খতিব হওয়ার সুবিধা হচ্ছে, সবাই মিলে ওয়াজের জন্য সুর আবশ্যক করে দিয়েছে। কিন্তু জুমুয়ার আগের বয়ানের জন্য কিন্তু সুর আবশ্যক নয়। এজন্য সুর থাকা আবশ্যক না। দ্বিতীয়ত, ওয়াজে কিচ্ছা কাহিনী চলে, জুমুয়ার বয়ানে দলিলভিত্তিক জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়গুলোতে আলোচনা করতে হয়। কাজেই যারা ইনিয়ে বিনিয়ে কিচ্ছা কাহিনী গাইতে পারেন না তারাও খুতবার মিম্বরে সহজেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেন৷ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, জুমুয়াতে আবশ্যিকভাবে সকল শ্রেনী পেশার মুসলমানরা আসেন। আর ওয়াজে যাওয়া কারো জন্যই বাধ্যতামূলক নয়। এজন্য জুমুয়ার মিম্বরের প্রতি আমাদের গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। কারণ এখানে সমাজের অংশগ্রহণ অনেক বেশি৷কিন্তু আমরা ওয়ায়েজ হওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী। খতিব হতে হলে যে ইলমি যোগ্যতা লাগে তার দিকে আমাদের লক্ষ্য নেই৷ ইলমী যোগ্যতা তো পরের কথা আমাদের কুরআন মাজিদ তিলাওয়াতই শুদ্ধ না অনেকের। ওয়াজ চালু থাকুক৷ কিন্তু ওয়াজের ময়দানে সংস্কার আনা আবশ্যক হয়ে গেছে৷ প্রথমত, টাইমিং ঠিক করা দরকার৷ যেখানে মানুষকে কষ্ট দিয়ে ইবাদাত করা নিষেধ সেখানে আমরা এই কাজ কিভাবে করি? যেমন আমরা রাত গভীরে ৩০-৪০ টা মাইক লাগিয়ে গলা ফাটিয়ে ওয়াজ করি, জিকির করি, দরুদ পড়ি। এতে গোনাহ হয় না সওয়াব হয় আমার খুব বেশি সংশয় আছে। অসুস্থ মানুষ, বৃদ্ধ ও শিশুদের খুব কষ্ট হয় আওয়াজের কারণে, মহিলারা ঘরে নামাজ পড়তে পারেন না শব্দের কারণে। ওয়াজ আয়োজকদের এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত এবং রাত ১১ টার মধ্যে ওয়াজ মাহফিল শেষ করে দেয়া উচিত। এই বাজে কালচার থেকে আমরা বের হয়ে আসার চেষ্টা করি। দ্বিতীয়ত, ওয়াজে সুরের চাইতে ইলমি আলোচনাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তৃতীয়ত, বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে৷ মান্দাতা আমল থেকে চলে আসা হাতেগোনা ৪-৫ টি বিষয়ের মাঝেই যেন আলোচনা সীমাবদ্ধ না থাকে৷ আলোচনাগুলো যেন বাস্তবমূখী ও জীবনঘনিষ্ঠ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ আর যোগ্য খতিব যেন মসজিদে মসজিদে দিতে পারি সেদিকে খেয়াল রাখি। ইলম চর্চার দিকে আমাদেরকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে ফিকহ এবং তিলাওয়াতের উপরে আমাদেরকে জোর দিতে হবে। খুতবার মিম্বরগুলো ভুল মানুষদের হাতে চলে যাচ্ছে, ফলে সমাজ ভুলদিকে ডাইভার্ট হচ্ছে৷ এখন নয় তো কখনোই নয়। পরিবর্তন আবশ্যক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *