শুধুমাত্র মুর্শিদের ব্যক্তিগত খেদমত করার নামই তাসাউফ না

Spread the love



সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী: আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহ পাকের ইবাদাতের জন্য যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলছেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ “আমি জ্বীন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদাতের জন্য।”(আল কুরআন, ৫১ঃ৫৬) সকল তাফসিকারকগণের সর্দার ও বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এই আয়াতে উল্লেখিত “লিইয়াবুদুন” এর তাফসির করেছেন “লিইয়ারিফুন”৷ অর্থ্যাৎ আমার পরিচয় জ্ঞান হাসিল করবে। অর্থ্যাৎ মারেফাত হাসিল করবে। তাই এই আয়াতের তাফসির হবে, আমি জ্বীন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি আমার পরিচয় জ্ঞান বা মারেফাত হাসিলের জন্য। তাই আমরা আল্লাহ পাকের পরিচয় জ্ঞান বা মারেফাত হাসিল করার তরিকা জানার জন্যই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পীর ও মুর্শিদের শরণাপন্ন হই। হাদিস শাস্ত্রে অভিজ্ঞ মানুষকে আমরা মুহাদ্দিস বলি, তাফসির শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে আমরা মুফাসসির বলি, ফিকহ বা ইসলামী আইন শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে বলি ফকিহ বা মুফতি। তেমনি মারেফাতে ইলাহীর শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তি হচ্ছেন সুফি তরিকার শায়খগণ। সুফি খানকা হচ্ছে সেই স্কুল যেখানে আত্মশুদ্ধি ও মারেফাতের জ্ঞান বিলি করা হয়৷ পীরের খেদমত হচ্ছে তাসাউফের একটা বাই প্রোডাক্ট। আমরা আল্লাহ পাক পর্যন্ত পৌঁছাতে চাই। সুফি শায়খগণ সেই রাস্তা জানেন। তাই আমরা তাঁদেরকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। আমরা এজন্য তাদের খেদমত করি। কিন্তু তরিকত তাসাউফপন্থী ভাইদের অনেকের অবস্থা দেখে আমার মনে হয়, তারা পীর ও মুর্শিদকে সম্মান করে, পীরকে হাদিয়া দিয়েই কেবল জান্নাত কিনে নিতে চায়, নাউজুবিল্লাহ। অথবা এটা মনে করে যে, কেবল পীর মুর্শিদের সেবা করলেই আল্লাহ খুশি হয়ে যাবেন। আমার মনে হয় আমাদের রুহানী তরক্কি এখানেই থমকে গেছে। আমরা মাধ্যমকে গন্তব্য বানিয়ে নিয়েছি। আমাদের গন্তব্য ছিল আল্লাহর পরিচয় জ্ঞান বা মারেফাত। আর মাধ্যম হচ্ছেন পীর ও মুর্শিদ। কিন্তু আমরা উল্টোটা করে দিয়েছি। এই কারণেই আমরা পীর ও মুর্শিদের কাছে বছরের পর বছর পড়ে থেকে এবং বছরের পর বছর খানকাতে এসেও কোন লাভ হয় না। পীরের দরবারে আসা যাওয়ার মাঝে আমাদের জীবন কেটে যায় কিন্তু আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই পড়ে থাকি। রুহানী উন্নতির কোন ছিটেফোঁটাও পাই না আমরা। কারণ আমাদের মাঝে আত্মশুদ্ধির কোন চেষ্টা নাই, মুরাকাবা, রিয়াজত সাধনা নাই। এমনকি ফরজ ইবাদাত বন্দেগী পর্যন্ত আমরা ঠিকমত করি না। অনেকের মাথায় ঢুকে গেছে, পীর পাড় করবেন। মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ। অথচ তাসাউফের কাজ মূলত তিনটি। তাখলিয়াহ, তাহলিয়াহ ও তাজলিয়াহ। তাখলিয়া হচ্ছে মন্দকে পরিত্যাগ করা। তাহলিয়া হচ্ছে ভালো বা উত্তমকে গ্রহণ করা। আর তাজলিয়াহ হচ্ছে সম্পূর্ণ আল্লাহ প্রদত্ত বিষয় যা একনিষ্ঠভাবে তাখলিয়া ও তাহলিয়ার উপর আমল করার ফল৷ এটাই হচ্ছে সেই মাকামে ইহসান যা সেই বিখ্যাত হাদিসে জিবরিলে বর্ণনা করা হয়েছে। “এমনভাবে ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, আর যদি মনে হয় আল্লাহকে দেখছ না, তবে তিনি তো নিশ্চয়ই তোমাকে দেখছেন।” (বুখারী ও মুসলিম) আল্লাহ পাক আমাদেরকে গন্তব্যে পৌঁছানোর তওফিক দান করুন। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন করার তওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *