মুরাদনগরে প্রভাবশালী প্রতিবেশীর রোষানলে অসহায় এক নারী

Spread the love

মুরাদনগর প্রতিবেদকঃ প্রভাবশালীর রোষানলে পড়ে ফাতেমা বেগম নামে এক অসহায় নারী গত ৭ মাস গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে উর্ধ্বতন মহলে আবেদন করে উল্টো মামলা খেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূক্তভোগি ফাতেমা বেগম কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা গ্রামের মৃত আবুল শাহ’র মেয়ে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কামাল্লা মোহাম্মদীয়া দরবার শরীফের আবুল শাহ’র মাজারের খাদেম ফাতেমা বেগম প্রতিবেশী মৃত আমির আলীর ছেলে আশরাফ আলীর কাছ থেকে দুই শতক জায়গা ক্রয় করে। বিভিন্ন প্রলোভনে আড়াই লাখ টাকা নিলেও দলিল দেয়নি আশরাফ আলী। বেশ কয়েক মাস ঘুরাঘুরির পর উপায়ন্তর না পেয়ে দলিল পাওয়ার জন্য থানা পুলিশের দারস্ত হয়। পুলিশের কাছে অভিযোগ করায় আশরাফ আলী ক্ষীপ্ত হয়ে গত ২৪ মার্চ রাতে ফাতেমা আক্তারের বসত ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে ঘরের যাবতীয় মালামাল, মাজারের সরঞ্জামাদি ও স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে খোদ ফাতেমা আক্তারের বাম গাল ও বাম হাত পুড়ে যায়। রাতেই তাকে চিকিৎসার জন্য মুরাদনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভূক্তভোগি ফাতেমা আক্তার বলেন, প্রতিবেশী আশরাফ আলী জমি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে জমি দেয়নি। আমাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে আগুন দিয়ে আমার ঘর পুড়িয়ে দেয়। আগুন নিভাতে গিয়ে আমি নিজেও দগ্ধ হই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ২৬ মার্চ মুরাদনগর থানায় অভিযোগ করি। ওই সময় পুলিশের এসআই আব্দুল গোফরানকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিলেও মামলা না নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। পরে অভিযোগের তদন্তভার দেওয়া হয় এসআই মো: মঞ্জুকে। সে মতে কামাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ খানসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মুরাদনগর থানায় একটি বৈঠক বসে। বৈঠকে আমার নামে দুই শতক জায়গা লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও আমাকে দলিল দেয়নি। পরে এসআই মো: মঞ্জুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি করোনার কথা বলে ঘুরাতে থাকেন। এরই মধ্যে নানান অজুহাতে এসআই মো: মঞ্জু ৩ দফায় আমার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি নিয়ে পিড়াপিড়ি করলে আমার অজান্তেই সই নিয়ে গত ১০ জুলাই একটি মামলা এফআইআর করেন (যার নং ১১/১৩৭)। মামলাতে আগুনের কোন ঘটনা উল্লেখ না করায় থানার ওসির দারস্ত হই। ঘটনার সব বিস্তারিত ওসি একেএম মনজুর আলমকে জানালে তিনি এসআই মঞ্জুকে ডেকে এনে আমার কাছ থেকে নেওয়া ৩৫ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলেন এবং সেই ৩৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়। কিন্তুু চার্জশীটে আগুন লাগার কোন ঘটনা উল্লেখ করেনি (যার নং ১৪৫)। দুর্বল চার্জশীটের কারণে আসামীরা ওই মামলায় আদালত থেকে জামিনে এসে মিথ্যা মামলায় জড়িত করে আমাকে ও স্বাক্ষীদের হুমকি ধমকি দেয়। উপরুন্ত আমার ও আমার মামলার স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে তাদের বাড়িতে আগুন লাগানোর মিথ্যা অভিযোগ এনে গত ১৮ আগষ্ট কুমিল্লার ৮নং আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন (যার নং সিআর-২০১/২০)। মামলাটি তদন্ত করার জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফাতেমা আক্তার আরো বলেন, নিরূপায় হয়ে সাহায্য চেয়ে পুলিশের আইজিপিসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করি। একদিকে আগুন লাগিয়ে আমাকে সর্বশান্ত করে দেয়। অপর দিকে ৩ অক্টোবর জেলা গোয়েন্দা শাখায় হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ করলে আমার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।এ ঘটনায় সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আশরাফ আলীর ঘরে গত এক বছরে আগুন লাগার কোন ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আশরাফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদূত্তর দেননি। তিনি বলেন, যা বলার আদালতে বলব, আপনাদের কাছে কিছু বলব না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার এসআই মো: মঞ্জু বলেন, তদন্ত করে আমি যা পেয়েছি, তাই চার্জশীটে উল্লেখ করেছি। কামাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান ফিরাজ খান বলেন, বৈঠকে ফাতেমা আক্তারকে ২ শতক জমি রেজিষ্ট্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আশরাফ আলী আমাদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেছেন। পরে বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। শুনেছি উল্টো ফাতেমার বিরুদ্ধে মিথ্যা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *