মানুষের জনপ্রিয় হচ্ছে চাঁদপুর বৌ-বাজার

Spread the love

মোহাম্মদ বিপ্লব সরকার চাঁদপুর জেলা প্রতিবেদকঃচাঁদপুরে নিন্ম শ্রেণীর মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের বাজার চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার নতুনরাস্তা সংলগ্ন বৌ-বাজার। বাজারটি সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। এখানে প্রায় ২শতাধিক ভ্রাম্যমান দোকানী নিত্য প্রয়োজনীয় পরশা সাজিয়ে বসে প্রতিনিয়ত। এই বাজারে ৫ টাকার তরকারি, ২০ থেকে ৫০ টাকার মাছ, ৫০ টাকার গোশত, ৫ টাকার মসলাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় হয়। বাজারটি গরীব, অসহায়, দিনমজুরসহ নিন্ম শ্রেণীর মানুষের জন্য খুবই জনপ্রিয়। বাজারের বেশীর ভাগ ব্যবসায়ীরা হলেন নারী, স্বামীহারা, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। সোমবার ২৩ নভেম্বর সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরাণবাজার নতুনরাস্তা সংলগ্ন বৌ-বাজারে প্রায় ২ শতাধিক ভ্রাম্যমান নারী, পুরুষ ব্যবসায়ী রাস্তার দু’পাশে ড্রেনের ঢাকনার (স্লাপ) উপর নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কম মূল্যে বিক্রয় করছে। মোমফ্যাক্টরী ও রিফিউজি কলোনীর বিধবা ও আসহায় নারীসহ নিন্ম শ্রেণীর মানুষ তরি-তরকারি, মাছ ও মাংস কম দামে বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য কিনতে সেখানে ভিড় করছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। এবাজারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কেনা-কাটা করতে পারা যায়। গোশত ব্যবসায়ী আব্দুল শুক্কুর জানায়, আমি প্রতিদিন ৫২০ টাকা দরে বাজার থেকে গরুর গোশত ক্রয় করে এনে ৫৫০ টাকা করে বিক্রয় করি। ২শ গ্রাম থেকে আড়াইশ গ্রাম গোশত নেওয়ায় খরিদদার বেশী। আবার কখনও ৫০ থেকে ১শ’ টাকার গোশতও বিক্রয় করতে হয়। তরকারি বিক্রেতা স্বামীহারা নয়ন বেগম, শাহনাজ বেগম জানায়, বাজারে ৪০টাকা করে বিক্রয় করা কুমড়া এখানে ক্রেতার সাধ্য অনুযায়ী ১০ টাকারও বিক্রয় করতে হয়। কমদামে আমরা তরকারি কিনে এনে কমেই বিক্রয় করি। কারো কাছে হাত না পেতে নিজেরা নিজেদের সংসার পরিচালনা করি। নার্গিস বেগম, রানু জানায়, স্বামী লেবারের কাজ করতে গিয়ে আহত হয়ে এখন শয্যাশায়ী। আড়ত থেকে কম মূল্যে তরকারি এনে এখানে বিক্রয় করি। বিক্রয়ের টাকা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলাই। পেয়াজ, আদা, রসুন আলু বিক্রেতা হালেমা বেগম, রেহানা জানায়, একজনের আয় দিয়ে সংসার চলে না। তাই পাশাপাশি এগুলো বিক্রয় করি। ৫, ১০, ২০ টাকার খরিদদারই বেশী। মাছ ব্যবসায়ী বাচ্চু, নাজিম উদ্দিন, খলিল শিকদার, শেলী আব্দুস ছাত্তার ও শেলী জানায়- গরীব, অসহায়, দিনমজুরসহ নিন্ম শ্রেণীর মানুষরা এখানে বেশী। চাহিদা অনুযায়ী ৩০ থেকে ৫০ টাকার মাছও বিক্রয় করতে হয়। কেজি পরিমান মাছ কিনার ক্রেতা এখানে কম রয়েছে। বাজারে ক্রয় করতে আসা মাসুদা বেগম, তাসলিমা বেগম, আক্কাস বেপারী, শহীদ ও জব্বার জানায়, এই বাজার থেকে কমমূল্যে সাধ্য অনুযায়ী যে কোন মাছ, তরি-তরকারি, গোশত ক্রয় করতে পারি। যা বড় বাজারে গেলে পারা যায় না। বরং বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা অল্প জিনিস কিনতে গেলে খারাপ আচরণ করে। মুদি দোকানদার পারভেজ লস্কর জানায়, ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী১০ টাকার ডাল, ৫ থেকে ১০ টাকার মশলাও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় করতে হয়। এ এলাকায় যারা বসবাস করে সবাই দিনমজুর ও গরীব তাই তাদের চাহিদা অনুযায়ী সদাই বিক্রি করতে হয়। প্রতিবন্ধী কুট্টু ত্রিপুরা ও আনোয়ার হোসেন জানায়, লেবারের কাজ করতে গিয়ে বস্তা চাপায় আহত হই। আড়ৎ থেকে কমমূল্য লেবু, পেয়াজ, রসুন এনে বিক্রয় করে সংসার চালাই। কাপড় ব্যবসায়ী বৃদ্ধ আরশাদ বেপারী জানায়, বাসা বাড়ি থেকে জামা কাপড় সংগ্রহ করে ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রয় করি। তবে আজকে একটাও বিক্রয় হয় নাই। কয়েকজন স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ী সাথে কথা হলে তারা জানায়, নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য এই বাজারটি অনেক জনপ্রিয়। এখানে স্বাধ্যের মধ্যে পণ্য বিক্রয় করা হয়। এই রাস্তাটি দিয়ে পণ্য আনা নেওয়ার জন্য ট্রাক ভ্যান চলাচল করে। বাজার চলাকালীন সময়ে রাস্তায় যেন যান চলচলে কোন সমস্যা না হয়, সেইজন্য মো. সোহাগ সর্দার নামে একজন শ্রমিক রেখেছি শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে। কিছু লোক বাকালীপট্টির বাজারের ব্যাবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্নমহলে অভিযোগ করছেন যাতে নিন্ম শ্রেণীর মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের বাজারটি যাতে উচ্ছেদ করে দেয়। তাতে ঐ ব্যাবসায়ীরা অধিকমূল্যে ফায়দা লুটতে পারবে। পুরাণবাজারবাসীর দাবী নিন্ম আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে এই বাজারটি যাতে উচ্ছেদ করা না হয়। বাজারটি সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চলে। এতে যানবাহন চলাচলর কোন সমস্যা হয়না। নিন্ম শ্রেণীর মানুষের কথা চিন্তা করে বাজারটি রাখতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *