গ্রন্থমূল্য সমাদর–শামীমা সুলতানা
“জীবন আলোর চোখ পেয়ে যা দেখেছি জীবন দর্শনে,সে আমার এ জন্মের অহঙ্কার”এই অহঙ্কারী ব্যক্তিও তার কাব্যগ্রন্থ “সন্ধানী”সম্পর্কে কিছু কথা । কবি সাগর মনকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে যতটুকু জানি তার মত সহজ একজন মানুষ এ জামানায় খুঁজে পাওয়া মুশকিল । তার মত মানুষ প্রেমিক ও আমার নজরে খুব কম পড়েছে আজ পর্যান্ত । কিন্তু কবি বাস্তবিক জীবনে সহজ হলেও তার কবিতা একদম সহজ নয় ,তার কবিতা মানেই আড়ালে ঘেরা রহস্যের মায়াজাল। যেন রুপকে তার নিজেস্ব এক অভিধান আছে ।তাই তার লেখা সবাই খুব সহজে বুঝে উঠতে পারে না ,তবে একটু যানযোগে পড়লে পাঠক অবশ্যই নতুন কিছু খুঁজে পাবে তার কবিতায়। উত্তরাধুনিক কবিতায় ভরপুর “সন্ধানী” পড়ে আমি যতটুকু রসহ্য উম্মোচন করতে পেরেছি তার সংক্ষিপ্ত একটা বিবরণ দিবো । সন্ধানী হচ্ছে ক্ষীরসাগর, অসুর ও দেবতারা যে উদ্দেশ্য যে সমুদ্র মন্থন করেছিলো। ঠিক সেই একই উদ্দেশ্য রেখে কবি তার “সন্ধানী” কাব্যগ্রন্থ সাজিয়েছেন “খোঁজ”। একজন প্রকৃত পাঠক এই সন্ধানীসাগর মন্থন করে অনেক শাব্দিক মনিমুক্তা খুঁজে পাবেন বলে আমি আশা করি পৌরাণীক ক্ষীর সাগর মন্থন কালে যেমন কালকুট হলাহল উৎপন্ন হয়েছিল ঠিক তেমন বিহরের বিষ আপনাকে বিস্মিত করবে ,সেই বিষ পান করে দেবাদীবেদ মাহাদেব নীলকষ্ঠ নামে পরিচিত হয়েছিলো। ঠিক তেমন বিষ কবিকে দগ্ধ করেছে তার অনুভব পাবেন। আরো গভীরে মন্থন করলে পাবেন শব্দের অজস্র মনিমুক্তা । “হাত আর মুখের সম্পর্ক কখনোই মরে না । কেউ না কেউ তো বাঁচিয়েই রাখে আগুন ও মাটির সম্পর্ক। মরে যায় শুধু মন…মঞ্চ থেকে ঘাটের দূরত্ব দু’চোখের দূরত্ব কম, কপালে বসেছে শনি আর নাকের উপর যম। মৃত দীনের ওজন শরীরের চেয়ে শতগুণ আরো । হাতের উপর জীবন রেখে দেখা যাক সন্ধানীকে কত পথ বয়ে নিয়ে যেতে পারো।” সাগর মন্থনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো বিষ্ণুপত্নী লক্ষ্মী কে পুরাদ্ধার করা । ঠিক কবির ও মূল উদ্দেশ্য হলো লক্ষ্মী । পেট ও বুক ,ভাত ও প্রেমিকা । গ্রন্থে লক্ষ্মীর মৌনব্রত নামে তিনটা কবিতা আছে। ভাত আর প্রেমিকার অবহলো কতটা নিষ্টুর হতে পারে তার রূপচিত্র । সন্ধানী কাব্যগ্রন্থ ভালোবাসার এক অমর সাক্ষী। কাউকে কতটুকু ভালবাসা যায় সেটা সন্ধানী পড়লেই পাঠকের অনুভূত হবে । পাবেন প্রবাসীর কষ্টের কথা,চলমান মহাকাল করোনা নিয়ে অভাবের করুণ আর্তনাদের কথা । আরো পাবেন সাম্যবাদ নিয়ে কবিতা। কবি তার এই গ্রন্থ কে তার প্রেমিকা সন্ধানীকেই উৎসর্গ করেছে।এই উৎসর্গই যেন এক মহাকাব্য উৎসর্গ জীবন আলোর চোখ পেয়ে যা দেখেছি জীবন দর্শনে সেই চোখের ভিতর,সে আমার এ জন্মের অহঙ্কার । তবু যোগফলে শূন্যতায়; পরিক্রমায় লেপটে থাক অনাদি কালের শোক । জল ভাঙ্গা শব্দে কলমের প্রার্থনায় লিখে যাব সেই সন্ধানীই জয়ী হোক। তার অবহেলা আমার কান্নার উপসর্গ হয়ে ছায়ার দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ডেকে যাক কাজল ঘুমের দিন ,তবু তার প্রেম অমলিন ।।সে কবিতা হয়ে এসে, গেছে মিশে নিশ্বাস প্রাপ্তির যোগে । আমি ভুগি নিয়ন আলোর সরল রেখায় তার শব্দগত রোগে । রূপায়নে পড়ে থাক বৈকালিক স্বপ্নের আত্মারা। ধোঁয়ার চুম্বন গল্প শুরু হওয়ার আগে যদি পেয়ে যাই অদৃশ্য শব্দের কানামাছি চোখ,তবেই আমি স্বার্থক ।।এঁটেল মাটির শিল্পে কতটুকু অবহেলা পেলে পুরুষও কাঁদে, কতটুকু হাসির দেনায় একা ঘর বাঁধে। যদি এতেও অপ্রমাণিত হয় নিশ্বাস বিশ্লেষণের ইতিহাস। তবে ভালোবাসা হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহাস। জননী যেমন জন্ম দিয়ে আজন্মই ঋণী করে রাখে,কিন্তু জীবনটা যাকে ভালোবাসার নির্দোষ উপহার হয়ে বেঁচে আছে; আমার এ ক্ষুদ্রগ্রন্থ উৎসর্গ করলাম সেই সন্ধানীকে।। আমি এই বহুগুণের অধিকারী কবির মঙ্গল কামনা করছি ।