নাসিরুদ্দিন হোজ্জা নিজে বিশাল পণ্ডিত ছিলেন

Spread the love

নাসিরুদ্দিন হোজ্জা নিজে বিশাল পণ্ডিত ছিলেন। তবে প্রায়ই তিনি মানুষকে বলে বেড়াতেন যে, পন্ডিত, উলামা, মুফতি, হাজি অমুক, হাজি তমুক, তারা সবাই কম বেশি বিভ্রান্ত, এক একজন একেক রকম কথা বলেন, কারো সাথে কারো কথার মিল হয় না। কাজেই তারা সবাই আসলে মূর্খ। দিনের পর দিন মানুষের কাছ থেকে তার এই ধরনের কথা বার্তা শুনতে শুনতে এই সব উলামা তার উপর রেগে সুলতানের দরবারে তার নামে বিচার দিলেন। এটা খুবই সিরিয়াস ব্যাপার। সেই সময়ে উলামাদের অপমান করা মানে সুলতানের নিজেরই অপমান। কেননা, উলামারা সরকারি চাকুরে, হোজ্জার মতন নন। সুলতান তাকে দরবারে ডেকে পাঠালেন।নাসিরুদ্দিন তার বিরাট পাগড়ি পরে গাধার পিঠে করে এসে হাজির হলো।সুলতান বললেন, ‘হোজ্জা, এই বার তুমি যে কিভাবে নিজেকে বাচাবে আমি সেটাই দেখতে চাই। এসো, এদের এই অভিযোগের সদুত্তর দাও দেখি।’হোজ্জা বললেন, ‘ও মাননীয় সুলতান, অবশ্যই উত্তর দেবো, এবং তাদের সম্পর্কে আমার অভিযোগ যে একেবারেই সঠিক সেটার প্রমানও দেবো। আগে আপনি আমাকে কিছু রুটি, কাগজ আর কলম এনে দেন। ‘তার দাবী মোতাবেক কাগজ, কলম আর রুটি নিয়ে আসা হলো।মোল্লা নাসিরুদ্দিন বললেন, ‘এবার এই উলামাদের সবাইকে একটা করে কাগজ আর কলম দেন আর তাদের সবাইকে লিখতে বলেন, এই রুটিটা আসলে কি? একজন কি লিখছে আরেক জন সেটা দেখতে পারবে না’।তার এই অদ্ভুত কথা শুনে সমস্ত বুদ্ধিজীবি, উলামা, মুফতি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে কাগজ কলম নিয়ে বসে গেলেন। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই তারা যার যার মতন লেখা শেষ করে কাগজ ফিরিয়ে দিলেন।নাসিরুদ্দিন হোজ্জা বললেন, ‘ও মাননীয় সুলতান, এবার আপনার মন্ত্রীকে পড়ে শুনাতে বলেন, তাদের কে কি লিখলেন’।মন্ত্রী পড়া শুরু করলেন।প্রথম কাগজে লেখা, ‘খাদ্য’।দ্বিতীয় কাগজে লেখা, ‘ময়দা আর পানি’।তৃতীয় কাগজে লেখা, ‘আল্লাহ্‌র কাছ থেকে পুরষ্কার’।চতুর্থ কাগজে লেখা, ‘বেক করা খামির’এছাড়াও অন্যান্যদের লেখায় ছিলো, ‘পুষ্টি’, ‘কেউ আসলে জানে না’, ইত্যাদি আরো নানান কিসিমের উত্তর।এবার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা বললেন, ‘ও মাননীয় সুলতান, আপনি নিজেই দেখতে পাচ্ছেন, আপনার বেতন খাওয়া এই বিশেষ শিক্ষিত উলামা, মুফতি, বুদ্ধিজীবি, যারা নিজেদেরকে এতোই বড় পণ্ডিত বলে দাবী করেন, সামান্য একটা রুটি কি বস্তু, সেটাতেই তারা একমত হতে পারে না। আর ধর্ম, দর্শন, ফিকাহ, তাফসির, শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত, মারিফাত, আজিমাত, ইত্যাদি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তো তাদের তাহলে একেবারে কথা বলাই উচিত নয়’।সুলতান তার কথায় লা জওয়াব। উলামা, মুফতি, বুদ্ধিজীবি সবাই দাড়ি চুলকায়, মাথা চুলকায়, কেউ বা কাশাকাশি করছে, কেউ মুখ লুকাচ্ছে, কারো মুখে কোন কথাই আর নাই। দরবারে সবাই স্তম্ভিত। সুলতান হাসতে হাসতে উল্টো তাকে পুরষ্কার হিসেবে স্বর্ণমুদ্রার থলে হাতে ধরিয়ে দিলেন। নাসিরুদ্দিন সেই সমস্ত মুফতি, উলামা, বুদ্ধিজীবিদের সামনে দিয়ে হাসি মুখে তার গাধায় চড়ে বাড়ির পথে রওনা দিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *