মেডিটেশন

Spread the love

গোলাম দন্তগীর লিসানীঃ মোরাকাবা, মুশাহিদা, তাফাক্কুর, মেডিটেশন, কনটেমপ্লেশন, চ্যান, জেন, জেজেন… নামের শেষ নেই। বিষয় একটাই। ধ্যান। গভীরভাবে সচেতনতার একটা বিশেষ মাত্রায় গিয়ে ভাবতে পারলে তা-ই ধ্যান।

একজন তিব্বতী লামা বিশ্বাস করেন, তিনি তাঁর গ্যাঙগ্রিন-আক্রান্ত পা ঠিক করেছেন এক বছর নিরবচ্ছিন্ন মেডিটেশনের মাধ্যমে। এখন বিজ্ঞানীরা তাঁর মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রত্যাশা, যদি কোনও মেডিক্যাল মিরাকল আবিষ্কার করা যায়!

মনের শক্তি কি মানুষকে নিয়ে যেতে পারে আত্মনিরাময়ের পথে? ২০০৩ সালে তিব্বতী লামা পাকয়াব রিনপোচে রিফিউজি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তখন তিনি সাইত্রিশ বছর বয়স্ক ডায়াবেটিস ও পটস ডিজিজে ভোগা একজন দেশছাড়া মানুষ। রোগ এত গাঢ় হয়ে গিয়েছিল যে ডান পা পুরোটাতেই গ্যাঙগ্রিন বাসা বেঁধে বসে। নিউইয়র্কে তিনজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখান তিনি। সবার একই পরামর্শ: কেটে বাদ দিতে হবে পা।

যে কেউ তিন তিনজন ডাক্তারের পরামর্শ অগ্রাহ্য করতে ভয় পাবে, কিন্তু রিনপোচে কোন সাধারণ মানুষ নন। ১৯৬৬ সালে জন্মান তিব্বতের খামে। ১৩ বছর বয়সে পড়ালেখা শুরু করেন লামা হিসাবে, ১৯৯৩ সালে তিব্বতী বুদ্ধশিক্ষার সর্ব্বোচ্চ মাত্রা গেশে ডিগ্রি পাবার সময় খোদ দালাই লামার হাতে পাখইয়াব রিনপোচের অষ্টম পুনর্জন্ম হিসাবে স্বীকৃতি পান।

স্বভাবতই তিনি পা কেটে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পথপ্রদর্শকের শরণাপণ্ন হবেন।

দালাই লামার সাড়া ছিল সাঙ্ঘাতিক। কেটো না। বরং সা লঙ মেডিটেশন ব্যবহার করো। নিজেকে সুস্থ করে তুলে অন্যদের কাছে প্রাচীণ শিক্ষা প্রসার ঘটাও। তিনি আরো কিছু ঐতিহ্যবাহী মন্ত্রের কথা বললেন।

এ সিদ্ধান্ত নিতে হলে বিশ্বাসের এক অন্যমাত্রার উল্লম্ফন প্রয়োজন পড়বে। ডাক্তাররা বললেন, মারা যেতে পারেন আপনি। কিন্তু রিনপোচের কোনও ভাবান্তর ছিল না। তাঁর কথা হল, একজন বৌদ্ধ হিসাবে আমার আর কী হতে পারে? বড়জোর মারা যেতে পারি। কিন্তু এক জীবনে একটা পা বাঁচানোর চেষ্টা না করেই ছেড়ে দেয়ার কোনও অর্থ নেই।

শুরু করলেন ধ্যান। রিনপোচের কথা অনুযায়ী, তিনি কোনও অষুধ গ্রহণ করেননি। আর খাবার ছিল খুবই সাধারণ। সকালে উঠে তিনি ধ্যান শুরু করতেন, খাবার সময় তিব্বত থেকে আসা সঙ্গীর সাথে একটু কথা বলা আর সামান্য খাদ্যগ্রহণ। এরপর আবার মেডিটেশন। রাতে একটা ভাল ঘুম। এই ছিল রুটিন।

রিনপোচের মনে পড়ে, প্রথম কয়েকদিন যাবার পরই তাঁর পায়ের পচা পুঁজ কালো হয়ে যায়। কয়েক মাস পর হয়ে পড়ে মেঘরঙা। এরপর শুরু হয় ক্ষতচিহ্ন। বাড়তে থাকে ফোলা। বাড়ে ব্যথা। গন্ধটা হয়ে পড়ে অসুস্থ করে তোলার মত।

সব দিনে দিনে বিপরীত দিকে যাচ্ছিল, শুধু তাঁর মনটুকু ছাড়া। মনে কোন সন্দেহ দানা বাঁধেনি।

তারপর, নয়টা দীর্ঘ মাসের পর, এমন কিছু হওয়া শুরু করল যাকে আমেরিকানরা বলে মিরাকল। নষ্ট পা থেকে বের হওয়া পুঁজ ও তরল স্বচ্ছ্ব ও পরিষ্কার হওয়া শুরু করল। ফোলা হয়ে পড়তে শুরু করল স্বাভাবিক। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সে পায়ের ওপর কিছুটা ভরও দিতে পারলেন। দশমাস পর শুরু করলেন হাঁটা। বহুদিন পর। আবার। প্রথমে দুই ক্রাচে। এরপর ক্রাচ নিলেন একটা। এরপর, একটা বছরও ঘোরেনি, হাঁটা শুরু করলেন দু পায়ে।

সবশেষে শুধু পায়ের পচন থামেনি, বরং মৃত পা টা আবার একটু একটু করে জীবিত হয়ে উঠেছে। নেই ডায়াবেটিস, উধাও হয়ে গেছে যক্ষাও।

এতদিনে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ডাক্তার রিনপোচেকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। বিশেষ করে তাঁর মস্তিষ্ক নিয়ে। সা লঙ মেডিটেশনের চর্চাকারীরা একটা বাতাস, বা ফুসফুস বা যাকে বলা হয় প্রাণশক্তি বা প্রাণা, সেটা দেখা শুরু করেন। ধ্যান অবলোকন যাকে বলে। পুরো বিষয়টাই মনের। মস্তিষ্কের। এই দেখার প্রক্রিয়ায় শরীরের মধ্যভাগ দিয়ে তাঁরা অসুস্থতা ও বিষ-বাঁধা পরিষ্কার করতে থাকেন। ধীরে ধীরে বড় চ্যানেলগুলো থেকে সূক্ষ চ্যানেলের দিকে যান।

ক্রেডিট::

আমার টিচার গ্র্যান্ডমাস্টার ইউরী বজ্রমুনী এই অংশটুকুর প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আমি শুধু অনুবাদ করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *