ঘরে বসেই পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনলাইন রিপোর্টার ॥ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তিনি।আজ রবিবার (২৪ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তার এ ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ সব বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং বেতারও সম্প্রচারিত হচ্ছে। ভাষণে তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এবছর সব ধরনের গণ-জমায়েতের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কাজেই স্বাভাবিক সময়ের মতো এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা সম্ভব হবে না। ঈদগাহ ময়দানের পরিবর্তে মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।গত তিন মাস ধরে করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে লড়ছে বাংলাদেশ। ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার গত ২৬ মার্চ থেকে চলছে সাধারণ ছুটি। সবাইকে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে। ঐক্যবদ্ধভাবে সঙ্কট মোকাবিলা করতে জনগণকে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা চিকিৎসা সক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি করেছি। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসপাতালকেও আমরা করোনাভাইরাস চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করেছি।এই সঙ্কটে কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের সহায়তায় জন্য সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন তিনি।এ পর্যন্ত এক লাখ ৬২ হাজার ৮৬৭ টন চাল এবং নগদ ৯১ কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ১০ কেজি টাকা দরে বিক্রির জন্য ৮০ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।কাজ হারিয়েছেন কিন্তু কোনো সহায়তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত নন এ ধরনের ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট ১২৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য দু-দফায় ১৭ কোটিরও বেশি এবং সারা দেশের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ১২২ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনরায় সচল করতে ইতোমধ্যে এক লাখ এক হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।কাজ হারানো যুবক ও প্রবাসীদের সহায়তার জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি টাকা করে সর্বমোট ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে আমি ঘরে বসেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানাই, এই দুঃসময়ে আপনি আপনার দরিদ্র প্রতিবেশি, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর কথা ভুলে যাবেন না। আপনার যেটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ান। তাহলেই ঈদের আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে আপনার ঘর এবং হৃদয়-মন। এই দুর্যোগে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় কৃষক এবং কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন ও ঈদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের ব্যবস্থাও তাদের করতে হচ্ছে। এসব কাজ করতে গিয়ে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মী এবং সংবাদকর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।’
বেশ কয়েকজন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ব্যাংক ও সংবাদকর্মী ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোয় ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।আপনারা অবশ্যই নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। ভিড় এড়িয়ে চলবেন। আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। মনে রাখবেন আপনি সুরক্ষিত থাকলে আপনার পরিবার সুরক্ষিত থাকবে, প্রতিবেশী সুরক্ষিত থাকবে, দেশ সুরক্ষিত থাকবে।