চার জন জিনের বাদশা গ্রেপ্তার করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ

Spread the love



অনলাইন ডেক্সঃ চার জন জিনে’র বাদশা গ্রেপ্তার করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

পলিশ সূত্রে জানাযায়, অতিসম্প্রতি চার জন জিনের বাদশা গ্রেপ্তার করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। বাস্তবতায় জিনের বাদশা বলতে কিছু নেই। এটি একটি প্রতারক চক্রে’র ছদ্মনাম। তারা মুঠোফোন ফোনের গভীররাতে মানুষকে ফোন দেয়। শুরুতে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপণ করে টার্গেটের মনকে নরম করার চেষ্টা করে। তাদেরকে বিশ্বাস করে যারা ফাঁদে পা দিলে বিভিন্ন কৌশলে প্রলুব্ধ করে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। টার্গেট সংগ্রহ করতে শুরুতে কথিত জিনের বাদশা চক্রের সদস্যরা গভীর রাতে নির্জন জায়গা থেকে একটি মুঠোফোন নম্বরকে টার্গেট করে। এরপর একাধিক সিম ব্যবহার করে ওই নম্বরে কল করতে থাকে। চক্রটি প্রতিরাতে ওই মুঠোফোন নম্বরটিকে ভিত্তি ধরে সেটির ডিজিট পরিবর্তন করে নতুন নম্বর তৈরি করে এবং সেগুলোতে কল করে। কল রিসিভ করলে,শুরুতে সালাম দিয়ে নিজেকে জিনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর মুঠোফোন কল রিসিভকারীকে বলে, তুমি খুবই সৌভাগ্যবান, মহান সৃষ্টিকর্তা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি তোমাকে অঢেল ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সাও স্বর্ণ প্রদান করবেন। যদি তারা বুঝতে পারেন, কলরিসিভকারী তাদের কথা বিশ্বাস করছেন না, ততক্ষণাৎ সংযোগটি কেটে দিয়ে নম্বরটি বন্ধ করে দেন। আর যদি দেখেন, মুঠোফোন রিসিভকারী তাদের কথা বিশ্বাস করেছেন,তাহলেই ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে প্রতারণার কৌশল। এভাবেই একটি বা একাধিক কলরিসিভকারীকে টার্গেটে পরিণত করে এগিয়ে চলে চক্রটির প্রতারণার কার্যক্রম। প্রথম ধাপে,চক্রটির প্রতি টার্গেটের বিশ্বাস ও আস্থা আরও জোরালো করার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রোজা রাখা ও সৎ পথে জীবন যাপন করতে বলে। তাদের সাথে টার্গেটের যোগাযোগের বিষয়টি গোপণ রাখতেও উদ্ভুদ্ধ করে। চক্রটির কথায় টার্গেট টাকা প্রদান করবে কি-না সেটি পরখ করার জন্য টোপ হিসেবে কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা বা মাজারে কোরআন শরীফ বা জায়নামাজ দেওয়ার কথা বলে তাদের দেওয়া নম্বরে মুঠোফোন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা পাঠাতে বলেন। যেসব টার্গেট এই প্রথম টোপটি গিলে টাকা প্রদান করেন, চক্রটি তাদেরকে পর্যায়ক্রমিকভাবে নানা উপায়ে প্রলুব্ধ করতে থাকে। দ্বিতীয় ধাপে,চক্রটি বশীভূত টার্গেটকে মাজারে মুসল্লিদের খাওয়ানোর জন্য একটি খাসি ও ২১ কেজি চালের দাম মুঠোফোন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠাতে বলে। এভাবে চক্রটি টার্গেটের কাছে থেকে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ধাপেও তাদের সাথে টার্গেটের যোগাযোগের কথা গোপণ রাখতে জোর দেয় চক্রটি। তৃতীয় ধাপে,চক্রটি টার্গেটের কাছে থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি করে। এজন্য চক্রটি টার্গেটকে দূরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ডেকে পাঠায় এবং সেখানে একা একা যেতে বলে। চক্রটি সেখানে কাগজ কিংবা কাপড়ে মুড়িয়ে কথিত সোনার পুতুল (কার্যত সেটি পিতল কিংবা সিমেন্টের তৈরি পুতুল) প্রদান করে। সেটি এমনভাবে রাখা হয়,যাতে না খুলে ভেতরে কি আছে- তা বোঝার উপায় থাকে না। পুতুলটি প্রদানের আগেই চক্রটি টার্গেটকে এই বলে ভয় দেখায়,পুতুলটি নিয়ে ঘরে ফেরার সময় কাউকে কিছু বলা যাবে না। সেটি কোনোভাবেই খুলে দেখা যাবে না। বাসায় নেওয়ার তিনদিনের পর জিনের বাদশা যখন বলবে, কেবল তখন সেটি খুলে দেখা যাবে। এ নির্দেশের অমান্য করলে তাঁর বিরাট আর্থিক ক্ষতি হবে। এমনকি ঘরে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে হঠাৎ মৃত্যু হবে। এতে ভীত হয়ে টার্গেট ঘটনাগুলো অন্যদের কাছে প্রকাশ করা বা ভেতরে কি আছে সেটি খুলে দেখা থেকে বিরত থাকেন। কথিত সোনার পুতুল হাতে পাওয়ার পর টার্গেট চক্রটিকে জোরালোভাবে বিশ্বাস করতে থাকেন এবং চক্রটির কথা মতো টাকা পাঠাতে থাকেন। চতুর্থ ধাপে, চক্রটি টার্গেটকে বলেন, তোমাকে সাতটি পুরস্কার দেওয়া হবে। সাতটি বড় হাঁড়িতে স্বর্ণের মোহর পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে। হাঁড়িগুলো মাটির ৪১ ফুট নিচে আছে। -এরমধ্যে একটি হাঁড়ির তলা খুলে গেছে। তলা মেরামতের জন্য ৩৩ হাজার ৫শ’ টাকা লাগবে। টার্গেট যদি বলে,তাঁর কাছে টাকা নেই,তখন ধার দেনা করে হলেও টাকা সংগ্রহ করতে বলে চক্রটি। এভাবে হাতিয়ে নেয় আরও টাকা। পঞ্চম ধাপে, চক্রটি টার্গেটকে বলে,তোমার ঘরের চার কোণায় রক্ত দিতে হবে। এজন্য চারটি খাসি বাবদ ৪৩ হাজার ৫শ’ টাকা পাঠাও।প্রলোভনে পড়া টার্গেট চক্রটির কথা মতো ৪৩ হাজার ৫শ’ টাকা পাঠায়। শেষ ধাপে, চক্রটি ভুক্তভোগীকে বলে, তোমার ভয়ানক একটি সমস্যা আছে। সমস্যাটির সমাধান করার জন্য সাতজন যুবতী নারী লাগবে। তুমি তো যুবতী নারী সংগ্রহ করতে পারবে না। আমাদের ২৫ হাজার ৫শ’ টাকা পাঠিয়ে দাও। আমরা সব ব্যবস্থা করে নিবো। এদের টার্গেট ২৫হাজার ৫শ’ টাকা পাঠায়। এভাবে, ধাপে ধাপে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে সটকে পড়ে প্রতারক চক্রটি। পরবর্তীতে টার্গেট যখন পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের কথিত সোনার পুতুলটি দেখান, তিনি বুঝতে পারেন আসলে সেটি সোনার কিছুই নয়, এটি নিছক পিতল কিংবা সিমেন্টের তৈরি। টার্গেট তখন বুঝতে পারেন যে,তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তবে, টার্গেটের আর্থিক অবস্থা ও পারিপার্শিক অবস্থা জেনে জিনের বাদশা প্রতারক চক্রটি প্রতরণা কৌশল ও টাকা চাওয়ার পরিমাণে কিছুটে হেরফের করে। যদি কখনো জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে কেউ ফোন দেন, সাথে সাথেই ওই মুঠোফোন নম্বরটি সংরক্ষণ করুন এবং দ্রুততার সাথে নিকটস্থ পুলিশকে জানান। প্রয়োজনে আইনী সহায়তা নিন। কোনোভাবেই প্রলোভনে পড়ে আর্থিক লেনদেনে জড়াবেন না। জিনের বাদশার নামের প্রতারণা চক্রটির বিষয় পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন। নিজে সতর্ক হন। এ ব্যাপারে অপরকেও সতর্ক করুন। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের অভিযানে জিনের বাদশা প্রতারক চক্রের অনেক সদস্য ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছ। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। চক্রটির নির্মূলের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু ব্যক্তি ব্যক্তিগত লোভ কিংবা অসচেতনতার কারণে গোপণে জিনের বাদশা প্রতারক চক্রের কথা শুনে নিজেকে ভিকটিমে পরিনত করছেন। অনেক সময় প্রতারিত হয়েও পুলিশকে জানাচ্ছেন না।এধরণে অপরাধীদের প্রতিরোধে জন্য জনগণকে সচেতনতা বৃদ্ধি লক্ষে ও পুলিশেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *