সরাইলে সরকারি কর্মকর্তা ইউপি চেয়ারম্যানসহ নতুন আক্রান্ত-৮ ঝুঁকিতে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও
মাহবুব খান বাবুল,সরাইল প্রতিবদেকঃসরাইলে করোনা ভাইরাসে নতুন করে মৎস্য কর্মকর্তা মায়মুনা জাহান ও চুন্টা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মিয়া সহ আক্রান্ত হয়েছেন ৮ জন। গত মঙ্গলবার সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে মৎস্য কর্মকর্তার সাথে এক মঞ্চে অতিথি হয়ে দীর্ঘ সময় অবস্থান করায় মহিলা এমপি উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর ও ইউএনও এ এস এম মোসা সহ অন্যরাও এখন আছেন করোনা ঝুঁকিতে। দ্রূত উনাদের নমুনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সরাইল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা: আনাস ইবনে মালেক। সরাইল হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ ৮ দিন পর গত বৃহস্পতিবার রাতে নমুনা নিরীক্ষার ফলাফল হাতে পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাইমুনা জাহান, চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া। ইউপি চেয়ারম্যান বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য সরাইল সদরের ছোট দেওয়ান পাড়ার বাসিন্ধা ফরহাদ রহমান, সাগরদীঘির পাড়ের আবুল বাছির, আশা এনজিও’র শাহবাজপুর শাখার দিবাঙ্কর সরকার, অরূয়াইলের মারূফা বেগম, শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের লাইজু বেগম ও নোয়াগাঁও গ্রামের সুরাইয়া বেগম আক্রান্ত হয়েছেন। সরাইলে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ২৯ জন। সুস্থ্য হয়েছেন ১ জন। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫২৫ জনের। আরো অনেকের ফলাফল এখনো আসেনি। প্রসঙ্গত: উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের আয়োজনে নিবন্ধিত জেলে পরিবারের ৫৪০ জনকে বিভিন্ন উপকরণসহ সেলাই মেশিন প্রদান উপলক্ষে গত ১৬ জুন সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হল রূমে সহ¯্রাধিক লোকের অংশ গ্রহনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার বেশ কয়েকদিন আগে মৎস্য কর্মকর্তা নমুনা দিয়েছিলেন সরাইল হাসপাতালে। অন্নদা স্কুলের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ৩১২ সংরক্ষিত নারী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম। নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম মোসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ, সরাইল থানার ওসি এ এম এম নাজমুল আহমেদ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মায়মুনা জাহান, সহকারী মৎস্য মকসুদ হোসেন প্রমূখ। সঞ্চালনায় ছিলেন মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি উপক্ষো করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে লোকজন সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ওই বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে মৎস্যজীবীদের নাম নিবন্ধন শুরূ হয়। শেষ হয়েছে দুপুর ১টার দিকে। দুইটার দিকে শুরূ হয় আলোচনা সভা। সভা শেষে বেশ কয়েকজনের হাতে তুলে দেয়া হয় উপকরণ সহ সেলাই মেশিন। পরে নাম মিলিয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে বিতরণ কাজ। উপকরণ বেশী হওয়ায় প্রত্যেকেই সাথে দুইজন করে লোক নিয়ে আসেন। আলোচনা ও বিতরণ কাজের দীর্ঘ সময় সকল অতিথিদের সাথে ছিলেন মায়মুনা জাহান। গত বৃহস্পতিবার রাতে আসা ফলাফলে মায়মুনা জাহানের করোনা পজেটিভ আসে। তাই ওইদিন অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা সকল অতিথিই এখন করোনা ঝুঁকিতে আছেন। তালিকা করে প্রত্যেকের দ্রƒত নমুনা পরীক্ষা দরকার। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরাইল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরাইল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: আনাস ইবনে মালেক মৎস্য কর্মকর্তা মায়মুনা জাহানের করোনা পজেটিভ আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৬ তারিখের অনুষ্ঠানে উনার সাথে যারা মঞ্চে ছিলেন। উনারা সকলেই করোনার ঝুঁকিতে আছেন। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সান্নিধ্যে এখন ১০ মিনিট থাকলেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের মাধ্যমে তাদের তালিকা নিয়ে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করব। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা গত রোববারে নমুনা দিয়েছিল। আমি দিয়েছিলাম সোমবারে। যেহেতু ১৬ তারিখের অনুষ্ঠানে সকলের সাথে মৎস্য কর্মকর্তাও ছিলেন এখন আমরা সকলেই ঝুঁকিতে। আমাদের সকলের নমুনা পরীক্ষা দরকার। আমি এই বিতরণ কাজটি ১টি ইউনিয়ন করে করতে বলেছিলাম। লোক সমাগম কম হত। কিন্তু তা না করে সকল ইউনিয়নকে এক সাথে ডেকে আনায় লোক সমাগম বেশী হয়ে গেছে। কর্মকর্তা আক্রান্ত হওয়ায় চিন্তায় পড়ে গেলাম।