আপনার সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবেনঃ তারিমের ফর্মুলা

Spread the love




সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারীঃ সন্তানদেরকে বড় করার ঐতিহ্যবাহী কিছু রীতি যা তারিমে (ইয়েমেনে) অনুসরণ করা হয়। রীতিগুলো আসলেই অনেক সুন্দর ও কার্যকর৷ তারিমে মহিলারা যখন প্র‍্যাগনেন্ট হন তখন তারা ১০০% নিশ্চিত করেন যে, তাদের পেটে যা যা যাচ্ছে তা হালাল। মাতৃদুগ্ধ পালনকারিনী মহিলারা বার বার আয়াতুল কুরসি, সূরা নাস ও সূরা ফালাক এবং সে সব দোয়া পড়েন যেগুলো পড়লে আল্লাহ পাক হেফাজত করেন। যখন একটা বাচ্চা প্রথম কথা বলতে শিখে তখন তাকে নিম্নের দোয়া পড়তে শিক্ষা দেয়া হয়ঃ
رَضِيتُ بِاللهِ رَبّاً، وبِالإِسْلامِ دِيناً، و بسيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم نَبِيَّاً ورَسُولاً
রাদিতু বিল্লাহি রাব্বান, ওয়াবিল ইসলামি দিনান, ওয়াবি সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবিয়্যাও ওয়া রাসুলা। অর্থঃ আমি আল্লাহ তায়ালাকে প্রতিপালক হিসেবে মেনে নিয়েছি, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মেনে নিয়েছি এবং হুজুর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামাকে নবী এবং রাসূল হিসেবে মেনে নিয়েছি। মাতাপিতারা সন্তানদেরকে নেক নিয়ত (good intentions) করার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেবেন এবং তারা সন্তানদেরকে সূরাতুল ফাতিহা যেভাবে শিক্ষা দেন সেভাবেই কী কী নেক নিয়ত করবে বাচ্চারা তাও শিক্ষা দেন। মাতাপিতারা সকল অবস্থায় সকল কিছুর জন্য সন্তানদেরকে আল্লাহ পাকের কাছে চাওয়া শিক্ষা দেবেন৷ যদি সন্তানরা কিছু চায় তবে মাতাপিতারা বলবেন, যাও!ওজু কর। দুই রাকাত নামাজ পড় এবং আল্লাহর কাছে চাও। তারা এটা করার পর তাদেরকে তা দিবেন এবং বলবেন, আল্লাহ পাক তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করেছেন। প্রত্যেক সন্তানকে ঘরের নির্দিষ্ট একটি কাজের দায়িত্ব দেয়া হবে। যেমন, এক সন্তান দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে আনবে, একজন ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করবে, একজন মেহমানদের যত্ন করবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। মাতাপিতারা সন্তানদেরকে রাতের শেষ ভাগে জাগিয়ে দেবেন, তাদেরকে সেই সময়ে জাগ্রত হওয়ার প্র‍্যাকটিস করানোর জন্য৷ বাবারা তাদের সন্তানদেরকে মসজিদে নিয়ে যাবেন সেই সময়ে৷ মাতাপিতারা বাড়িতে প্রতিদিন অথবা অন্তত সপ্তাহে একদিন মাহফিলের আয়োজন করবেন এবং সেখানে কিছু কুরআন মাজিদের তিলাওয়াত হবে, হাদিস ও ফিকহের কিছু দরস দেয়া হবে৷ তারা তাদের মাহফিল সমাপ্ত করবেন দরুদ -সালাম এবং দোয়ার মাধ্যমে। মাতাপিতারা সন্তানদেরকে পবিত্র মাস ও দিনগুলোতে একত্রিত করবেন, যেমন ধরুন, রামাদানে, এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কী কী ভালো কাজ করতে পরিকল্পনা করেছ? উদাহরণস্বরূপ তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে তারা কুরআন মাজিদ কতটুকু পড়বে এই রামাদানে অথবা দান খয়রাত কতটুকু করবে। যখন তাদের কোন পুত্রসন্তান বালিগ হবে তখন পিতা একজন শায়খকে এবং সমাজের কিছু মুরুব্বিকে দাওয়াত দিবেন এবং ঘরে একটি মাহফিলের আয়োজন করবেন। পিতা তার পুত্রকে জানিয়ে দেবেন যে, এখন থেকে সে তার সকল কাজের জন্য দায়ী হবে আইনের চোখে এবং এখন থেকে তার দুই কাঁধে দুই ফেরেশতা থাকবেন যারা তার কাজগুলো রেকর্ড করবেন। মাতাপিতারা ছেলেদের চাইতে মেয়েদের পড়ালেখার দিকে অধিক মনোযোগী হবেন কারণ মেয়েরা ঘরের অভ্যন্তরে অধিক সময় ব্যয় করে। একটি মেয়েকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা ও প্রতিপালন করা মূলতঃ একটি পুরো জাতিকে শিক্ষিত করা ও প্রতিপালন করার ন্যয়। মাতাপিতারা সন্তানদেরকে যত শীঘ্র সম্ভব বিয়ে দিয়ে দেবেন। কারণ তারা চান না যে সন্তানরা কোন শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত হোক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সন্তানদের উপর খাস রহমত করুন এবং তাদেরকে এই দুনিয়াতে এবং পরকালে কল্যাণ দান করুন।

বিঃ দ্রঃ এরকম তরবিয়তের জন্যই হয়ত শায়খ হাবিব ওমর, শায়খ হাবিব আলি জিফরি মা জি আ সহ আরো শত শত বিখ্যাত দায়ী আল ইসলামীর জন্ম হয়েছে ইয়েমেনের তারিমে। মূলঃ কে কিউ যেড ইন্সটিটিউট
Credit: KQZ Institute

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *