চাঁদপুরে ইব্রাহিমপুর ও আলুর বাজারে ভাঙন ঠেকাতে হোগলা পাতার বাঁধ

Spread the love

মোহাম্মদ বিপ্লব সরকার : উজান থেকে নেমে আসা পানিতে প্রমত্তা মেঘনা চাঁদপুরে উত্তাল হয়ে ওঠেছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের অর্ধশত বাড়িঘর। নদীপাড়ের অনেকে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন দিশেহারা। কেউ কেউ বসতি সংলগ্ন এলাকায় হোগলা পাতা বাঁধ দিয়ে ভাঙন ঠেকিয়ে বাড়িঘর রক্ষার চেষ্টা করছেন। স্বেচ্ছাশ্রমে আশপাশের চরাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হোগলা পাতা ও গাছের ডালপালা দিয়ে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালান। গত কয়েক দিনে মেঘনার ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের ইব্রাহিমপুর ও পাশের আলুরবাজার ফেরিঘাট এলাকা। এছাড়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ছোট একটি বাজার ও বিআইডব্লিউটিসির টার্মিনালের একাংশ। নতুন করে আবারো ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আশপাশের কয়েকশ’ পরিবার। আলুরবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন গাজী। এরইমধ্যে বয়স পেরিয়েছেন ৬০। তিনি এ পর্যন্ত পরিবার নিয়ে ১২ বার স্থান পরিবর্তন করেছেন। এরপরও নদীভাঙন তার পিছু ছাড়ছে না। সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘নদী আমারে অনেকবার ভাঙছে। অনেকবার জায়গা বদলাইছি। অহন আবার ভাঙতাছে। কি করমু, বুঝতাছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে আছি।’ তিনি জানান, তার স্ত্রী, চার ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। আগে নদীর পূর্ব পাড়ে ছিলেন। সেখানে কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এরপর বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিলেও নদী তার সব কেড়ে নিয়েছে। একই এলাকার ভাঙনের শিকার মো. সানাউল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘বয়স অইছে বাবা। অনেকবার নদীভাঙনের শিকার অইছি। অহন ভাঙতাছে। বউ, পোলাপাইন নিয়া কোথায় যামু? আমাগো তো জায়গা কিননের মতো পয়সা নাই।’ স্থানীয় বাসিন্দা রুমা বেগম ও রহিমা বেগম জানান, কয়েকদিন ধরে মেঘনা নদীতে সব তলিয়ে যাচ্ছে। অনেকের বসতঘর ও জমি বিলীন হয়ে গেছে। স্বামী, সন্তান নিয়ে চিন্তার মধ্যে পড়েছেন তারা। নদীভাঙনের শিকার আব্দুল মান্নান বেপারী বলেন, ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। স্থায়ী কোনো ঠিকানা না থাকায় মেঘনায় ভাঙনের শিকার কয়েকশ’ পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মো. সফিকুল ইসলাম রাঢ়ী বলেন, ভাঙন রোধে শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাসিন্দারা। এজন্য আশপাশের চর থেকে সংগ্রহ করা হোগলা পাতা দিয়ে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইব্রাহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান বলেন, ২০১৬ সালে আলুরবাজার ফেরিঘাটের নৌ চ্যানেল ড্রেজিং করার পর থেকেই দক্ষিণ পাশের বিশাল এলাকাজুড়ে এ ভাঙন চলছে। তবে বর্ষা এলে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। কয়েক দিনের ভাঙনে অনেক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছে। ভাঙনে রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি বস্তা ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এসব বস্তা ফেলা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *